নামজারির সরকারি খরচ ১১৭০ টাকা,অথচ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নেন সর্বনিম্ম ৬ হাজার টাকা!
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সরকারি ফির অতিরিক্ত টাকা না দিলে সেবা থেকে বঞ্চিত ও হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক সিকদারের বিরুদ্ধে।
একটি জমির খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ এক হাজার ১৭০ টাকা হলেও দলিলভেদে নেওয়া হয় সর্বনিম্ম ৬ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি এক হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকা খরচ হওয়ার কথা।
শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মিউটেশন করতে আসা শহীদ শিকদার অভিযোগ করে বলেন,”বুধবার(২ অক্টোবর)সকালে শিকারমঙ্গল ভূমি অফিসে গেলে ভূমি কর্মকর্তা মোঃ ফারুক সিকদার মিউটেশনের জন্য আমার কাছে ৬ হাজার টাকা দাবী করেন।তখন আমি তাকে ৫ হাজার টাকা দিলে তিনি ৬ হাজার টাকার এক টাকাও কম হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন।পরবর্তীতে আমি বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিক সহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের জানাই।তখন ছাত্ররা এসি ল্যান্ড অফিসে গিয়ে বিষয়টা এসিল্যান্ড স্যারকে জানানোর পর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ফারুক সিকদার আমার টাকা ফিরিয়ে দেয় এবং আমাকে কালকিনি হতে মিউটেশন করে নিতে বলেন।ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এমন অনেকের সাথেই করে থাকেন।আমরা এমন দুর্নীতি থেকে মুক্তি চাই।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আরো অনেকে জানান,”শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছে।এখানে সরকারি নীতিমালার বাইরে চুক্তি অনুযায়ী মোটা অঙ্কের ঘুস ছাড়া নামজারি হয় না। নামজারির জন্য মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন এখানের কর্মকর্তারা।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা কথা বলতে গেলে প্রথমে তড়িঘড়ি করে অফিস হতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক সিকদার।পরবর্তীতে অভিযোগের বিষয়ে জানতে যাওয়া সাংবাদিকদের তিনি ফোনের মাধ্যমে তার পরিচিত একাধিক সাংবাদিকের সাথে কথা বলিয়ে দেন।পাশাপাশি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অনলাইনের কাজ করা রিয়াদ নামের তার এক নিকট আত্মীয়কে দিয়ে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের করা অভিযোগ অস্বীকার করে শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ফারুক সিকদার বলেন,”অফিসের অনলাইনের বিভিন্ন কাজ করার জন্য রিয়াদ নামের আমার ভাতিজা গত কয়েকদিন যাবৎ এখানে এসেছে।”
আর জমির নামজারি করতে অতিরিক্ত টাকা নেয়া এবং পরবর্তীতে টাকা ফেরৎ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন,”আমি কারো কাছে অতিরিক্ত কোনো টাকা দাবী করিনি বা নেই নি।”
এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)মাহবুবা ইসলাম বলেন,”নামজারী করতে সরকারি ফি এর অতিরিক্ত কোন টাকার প্রয়োজন হয়না।আমি নিজে কোন দুর্নীতি পছন্দ করিনা।আর ভূমি অফিসের কারো দুর্নীতিকেও ছাড় দেয়া হবেনা। যদি কেউ কোন প্রকার অতিরিক্ত টাকা দাবী করে থাকে তবে ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাশাপাশি কোন প্রকার ভোগান্তি এড়াতে জনগনকে নিজে নিজে অনলাইনে নামজারির আবেদন করার আহবান জানান তিনি।