সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরি ও মন্ডপ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পী ও আয়োজক কমিটি।
সোমবার (৭ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতে খড়ের বেণী, কাদামাটি, বাঁশ, রং ও তুলির আচড়ে গড়ে তুলছেন একেকটি অসাধারণ প্রতিমা। দেব দেবীর আকৃতির পাশাপাশি মন্ডপ তৈরীতে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ।
দেবী দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিককে আকৃতি দিতে দিন-রাত পরিশ্রম করছে যাচ্ছেন তারা। একইভাবে পূজার আর বেশীদিন বাকি না থাকায় পূজার মন্ডপ, সাজসজ্জা থেকে শুরু করে কিভাবে পূজায় নতুন রূপ দেয়া যায় তা নিয়েই নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আয়োজক কমিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, শহরের কেন্দ্রীয় লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, আনন্দ মন্দির, শান্তি নগর গীতাশ্রম মন্দির, খাগড়াপুর মন্দির ও দীঘিনালার শীব মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত। মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ইতোমধ্যে খড় আর কাদামাটি দিয়ে প্রায়ই শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন চলছে রং আর তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজানোর কাজ।
মৃৎশিল্পী বাবলু কুমার দে বলেন, পুজার বাকি বেশি দিন না থাকায় আমরা রাত দিন পরিশ্রম করছি যাচ্ছি । খাগড়াছড়িতে চলমান পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় এবছর কাজ কম। সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের লাভও তেমন হচ্ছে না।
লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের পূজার প্রস্তুতি প্রায়ই শেষ। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধুনুচি নৃত্য, ঢাক-ঢোল বাজানো প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আয়োজন গুলো থাকছে। আর চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রশাসন সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আশাকরি এবছর শান্তিপূর্ণভাবেই পূজা উদযাপন করতে পারবো।
জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক মজুমদার বলেন, খাগড়াছড়িতে এবার ৬১টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর ৫৬টি মন্দিরে প্রতিমা পূজা এবং ৫টি মন্ডপে ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিএনপি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা সহ সমস্ত দল আমাদের পাশে আছেন। মন্দির কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী টিম সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আরো ভালো ভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবেন বরেও উল্লেখ করেন তিনি।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব যেনো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের সিভিল পোশাকধারী পুলিশ সদস্য থাকবেন।
তিনি আরো জানান, অতীতে যে পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল এ বছর তার চেয়েও বেশি থাকবে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে সার্বক্ষণিক। প্রতি বছরের মতো এবারও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।