মাদারীপুরের কালকিনিতে ভটভটি,নছিমন,করিমন,মাহিদ্র ট্রলীর মতো নিষিদ্ধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য কমছেই না। এতে প্রতিনিয়ত সড়কে যানজটের পাশাপাশি ঘটছে ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনা। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকেও জোরালো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে দাবী এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়,প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার প্রতিটি সড়ক দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ যানবাহন।মাঠে হালচাষ করার জন্য নির্মিত এসব মাহিন্দ্র ট্রাক্টর সড়কে চলাচলের ফলে রাস্তাগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে।সংস্কারের পর দ্রুতই আবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সড়কগুলো।এছাড়া লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক দিয়ে এসব যানবাহন চালানোর ফলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত উপজেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় যানজট লেগেই থাকছে।
পথচারী মেহেদী হাসান বলেন,”সড়কে যেসব অবৈধ যানবাহন চলে, সেগুলো কোনো নিয়মনীতি মানে না। এসব গাড়ি যেখানে সেখানে থেমে যায়,আবার হঠাৎ করে ইউটার্ন নেয়।এগুলোর লুকিং গ্লাসও নেই। বিকট শব্দ করে চলাচল করায় পেছন থেকে হর্ন দিলেও চালক শুনতে পায় না।যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থেকে যায়।প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এগুলো বন্ধ করা দরকার।”
জসিম নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন,”এসব অবৈধ যানবাহনের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করি।পুলিশ প্রায়ই মোটরসাইকেলের কাগজপত্র সাথে না থাকলে আটক করে মামলা দেয়।অথচ অবৈধ এসব যানবাহনের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেয় না !”
এসব অবৈধ যানবাহনের ফলে একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এতে অনেক প্রাণহানিও ঘটছে।একটি প্রাণহানির পর কিছুদিন এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল সীমিত থাকলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার শুরু হয় এদের দৌরাত্ম্য।সবকিছু দেখেও পুলিশ,প্রশাসন তাদের কিছুই বলছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার সাধারন জনগন।
তারা আরো জানায়,”সড়কে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। অথচ এই অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। এ বিষয়টি নিয়ে বিগত দিনে একাধিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুফল পায়নি উপজেলাবাসী। যার কারণে প্রতিনিয়ত অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে যানজট ও দুর্ঘটনা।”
অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল করিম বলেন,”মাঠে হাল চাষ করার জন্য নির্মিত এসব অবৈধ যানবাহন সড়কে চলাচল করায় রাস্তাগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদি কোন রাস্তার স্থায়িত্ব দুই বছর হয় তবে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে সেসব রাস্তা এক বছরেরও কম সময়ের মাঝে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা আইন শৃংখলা মিটিংয়ে আমি উপস্থাপন করেছি।”
এ বিষয়ে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর অবৈধ গাড়ী গুলো থেকে সুবিধা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমরা অবৈধ যানবাহন বন্ধে বরাবরই সোচ্চার রয়েছি।তবে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের কারণে পুলিশ এতদিন কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকায় অবৈধ গাড়ি গুলো আবার রাস্তায় চলাচল করতে শুরু করেছে।তবে এখন পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।দ্রুতই এসব যানবাহন চলাচল বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।”
এদিকে কালকিনিতে অবৈধ যান চলাচলের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা ও পৌর প্রশাসক উত্তম কুমার দাশ বলেন,ইতিপূর্বে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ হতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।সেসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুনরায় এসব অবৈধ যানবাহন সড়কে চলাচল করছে বলে শুনেছি।পুলিশের সহায়তায় এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
অবশ্য অনেক আগে থেকেই সরকার সড়কে অবৈধ যান চলাচল নিষিদ্ধের ঘোষণা দিলেও কার্যক্ষেত্রে এর প্রয়োগ দৃশ্যমান নয়।কালকিনিতে সড়ক দুর্ঘটনায় একাধিক প্রাণহানীর পরিপ্রেক্ষিতে নানা সময়েই অবৈধ যান চলাচলের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। যখন দুর্ঘটনায় প্রাণহানী হয় তখন কিছুদিন এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।এর কিছুদিন পর আগের মতোই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো এভাবে আর কতদিন এসব চলবে? সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল কি কখনোই বন্ধ হবে না ! এবার প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা আশা করছে কালকিনির জনগন।