ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারে পিয়াজ বিক্রি করতে এসে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত নারায়ণ চন্দ্র (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ী। এ ভাবে সে ৪/৫ বছর ধরে এই প্রতারণার ফাঁদ তৈরী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এতে পথে বসে ভাটই বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম লিটন। গত বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে ভাটই বাজার মেসার্স বাবলু ট্রেডার্সে নামে একটি পিয়াজের আড়তে এমন ঘটনা ঘটলে ধরা পড়ে যায় নারায়ন চন্দ্র। প্রতারণার দায়ে সাধরণ ব্যবসায়ীরা তাকে মারধর করে।
এ নিয়ে শালিস বৈঠক হয়। এদিকে বিষয়টি নিয়ে পানিঘোলা করতে একটি চক্র মাঠে নামে। তারা প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মেসার্স বাবলু ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারী ছাত্রদল নেতা বাবলু রহমানকে দোষারোপ করে। বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, এঘটনার সঙ্গে ছাত্রদল নেতা জড়িত না থাকলেও কে বা কারা সোনাবাহিনীকে ফোন করে খবর দিলে নারায়ণ চন্দ্রকে ব্যবসায়ীদের কবল থেকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পরে নারায়ণ চন্দ্রের ভাই জয় ঘোষ বাদি হয়ে শৈলকুপা থানায় বাবলুর রহমান ও অজ্ঞাত ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরদিন সেই মামলায় বাবলু জামিনও পান। এদিকে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া ছাত্রদল নেতা বাবলুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে আসল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়। ‘শৈলকুপায় চাঁদাবাজির সময় ছাত্রদল নেতা আটক’ এমন বিকৃত শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে শৈলকুপার ভাটই বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী ও মানুষের মাঝেও বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
এতে বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভও প্রকাশ করেন। খোজ নিয়ে জানা যায়, বাবলু রহমান একজন পিয়াজের আড়তদার ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মেসার্স বাবলু ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। পাশাপশি তিনি ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। পিয়াজ ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম লিটন জানান, আমি শৈলকুপা উপজেলা শহরে মেসার্স জীম এন্টার প্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি। সেই সাথে সপ্তাহের রবি ও বুধবার ভাটই বাজারে মেসার্স বাবলু ট্রেডার্স এর গোডাউনে পিয়াজ ক্রয় করি। গত ৯ অক্টোবর শৈলকুপা উপজেলার কচুয়া গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র বাড়ি থেকে ১শত ৪৯ কেজি পিয়াজ নিয়ে এসে আমাদের আড়তে বিক্রি করেন।
সেসময় আমরা তার কাছে পরিমাপ করা একটি স্লিপ প্রদান করি। স্লিপটি হারিয়ে গেছে বলে আমাদের থেকে পুনরায় আরও একটি স্লিপ গ্রহণ করেন এবং সেখানে ১শত ৫১ কেজি পিয়াজের পরিমাপ উল্লেখ করে স্বাক্ষর বিহীন স্লিপ তৈরী করেন। এছাড়াও ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে পিয়াজ দেওয়ার কথা বলে না দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আরও একটি ৪২ কেজির স্লিপ সংগ্রহ করেন। ঘটনার দিন বিকালে ক্যাশ থেকে যখন টাকা দেওয়া শুরু হয় তখন নারায়ণ চন্দ্রের প্রতারণা ধরা পড়ে এবং স্লিপ জালিয়াতির কথা নিজেই স্বীকার করেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত জনতা ও ব্যবসায়ীরা তাকে গণধোলাই দেয়।
এ ব্যাপারে ভাটই বাজারের পিয়াজের আড়তদার রাসেল আহমেদ জানান, আমরা এখানে ব্যবসা করি। প্রতারক সাব্যস্ত হওয়ায় উত্তেজিত জনতা নারায়ণ চন্দ্রকে মারধর করলে আমরা পাবলিকের হাত থেকে রক্ষা করে নিরাপদে রাখি। সেসময় নারায়ণ চন্দ্র তার ভাইকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন।
এরই মাঝে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে বাবলুর রহমানকে আটক করে এবং নারায়ণ চন্দ্রকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, একজন আড়তদারকে এভাবে ধরে নিয়ে মামলা দেওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ছাত্রদল নেতা বাবলুর রহমান জানান, আমি ১৫ বছর এই বাজারে ব্যবসা করে আসছি। প্রায়ই পিয়াজ ক্রয় করার পর হিসাবে গরমিল হয়। এরই জের ধরে এক কর্মচারিকে চোর সন্দেহে বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর বিকেলে ক্যাশ থেকে টাকা দেওয়ার সময় নারায়ণ চন্দ্রের স্লিপ জালিয়াতি হাতেনাতে ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টার এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে আমাকে আটক করে শৈলকুপা থানায় সোপর্দ করে। পরে আমার বিরুদ্ধে নারায়ণ চন্দ্রের মারধরের ঘটনায় তার ভাই জয় ঘোষ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্মানহানী ঘটেছে। আমাকে মিথ্যা দোষ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় ভুল খবর প্রকাশিত হয়েছে বলে আমি মনে করি।