পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বর্নিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুভ প্রবারণা পুর্নিমা উৎসব। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। শুভ প্রবারণা উৎসব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিন ব্যাপী রাখাইন পাড়ার আকাশে রঙিন ফানুস উড়িয়ে উৎসবে মেতেছে রাখাইনরা। বর্নিল সাজে সেজেছে বৌদ্ধ বিহার গুলো। মোমবাতি প্রজ্বলন, আতশবাজি নানা আয়োজন করা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ফানুস উৎসব।
এ উৎসবকে ঘিরে রাখাইন তরুণ তরুণী শিশুরা নাচে গানে মাতিয়ে তুলে বৌদ্ধ বিহার গুলো। কুয়াকাটা আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা ফানুস উৎসব দেখতে ভীড় জমায় বৌদ্ধ বিহার গুলোতে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে পালিত হয় ফানুস উৎসব। কুয়াকাটা কলাপাড়ার রাখাইন পাড়া গুলোতে শত শত রং বে রঙ্গের ফানুস উড়ানো হয়।
এ উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পাড়ায় পাড়ায় চলছে নানা রকম বাহারি পিঠা-পায়েস তৈরীর উৎসব।শুভ প্রবারণা উপলক্ষ্যে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া কুয়াকাটা উপকূলীয় এলাকার রাখাইন পল্লীতে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
বৌদ্ধ ভিক্ষু সূত্রে জানা গেছে, বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শুরু হয়ে এ পূর্ণিমাতে শেষ হয়। কার্তিকের এ পূর্ণিমার তিথিতে কুয়াকাটার রাখাইন সম্প্রদায় প্রবারণা উৎসব পালন করেন। এ সময় বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ৩ দিন ব্যাপী গৌতম বুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদন করা হয়। রাতে আকাশে উড়ানো হয় নানা রঙের ফানুস। এ দিনে রাখাইনরা আপ্যায়ন, অভিলাস পূরণ, ধ্যান শিক্ষা ও কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে প্রতিদিন সকালে পরিস্কার পোশাকে বিভিন্ন বিহারে গমন করে পুজা অর্চনা করেন।
রাখাইনদের ধর্মজাযক গৌতম বুদ্ধ মূলত একজন শাসক ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে ধর্ম প্রচারের কাজে। তাই সংসার জীবনের মায়া বিসর্জন দিয়ে ধর্ম প্রচারের জন্য আত্মনিয়োগ করেন নিজেকে। তিনি নিজ গৃহ ত্যাগ করে ভারতের কপিলা বস্তু নামক স্থানে পূণ্যকর্ম সম্পাদন করেন। পরে গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে অনেকে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি। তখন এক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন তিনি। নিজের চুল তলোয়ার দিয়ে কেটে আকাশে ছুঁড়ে মেরেছিলেন। সে চুল আর পৃথিবীতে ফিরে আসেনি। আকাশেই অদৃশ্য হয়ে যায়। গৌতম বুদ্ধ সেই পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করতে বৌদ্ব ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর এ সময় ফানুস উড়িয়ে এবং ধর্মীয় নানা আয়োজনের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে আসছে।
মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহারের পুরোহিত উত্তম ভিক্ষু বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এই দিন গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এ কারণে এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এটি রাখাইনদের উৎসব হলেও বর্তমানে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। শুভ প্রবারণা পূর্নিমা উপলক্ষে প্রতিটি পাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও সেনা সদস্যদের টহল অব্যাহত রয়েছে। ###
সম্পাদক ও প্রকাশক : আল মামুন, নির্বাহী সম্পাদক : ফোরকানুল হক (সাকিব), ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : সোহাগ আরেফীন,
প্রধান কার্যালয় : ৯২, আরামবাগ ক্লাব মার্কেট, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত