গত আড়াই মাসে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে পরামর্শ নিন। বেশি অক্ষম হলে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এ গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা করেন।
গনঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে রাজনীতির যে জমিদারী প্রথা চলে আসছে তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী আর এমপির ছেলে এমপি হবে এটা চলতে দেওয়া হবে না। এজন্য আমরা পরিবর্তনের রাজনীতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। আগে আমাদের নিজেদের পরিবর্তন হতে হবে, তারপর দেশের। আগষ্ট বিপ্লবের এই নতুন স্বাধীনতা আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। আমরা আর কোন দেশের দাসত্ব করতে চাই না। বাংলাদেশ সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গত ৫ দশকে যারাই ক্ষমতায় গেছেন তারাই দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিল। ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার থেকে শুরু করে প্রাইমারী স্কুলের পিয়ন সকলেই দূর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। গনঅধিকার পরিষদ দুর্নীতির মুল উৎপাটন করে সমৃদ্ধশীল দেশ ও জাতি গঠনে মাঠে নেমেছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, জনগণের যে প্রত্যাশা, এই যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে দৈত্য দানব হয়ে উঠে, রাজনৈতিক দলের নেতারা জমিদার হয়ে উঠে। এই জমিদার যেন না হতে পারে, দৈত্য দানব যেন না হতে পারে। তার জন্য আমরা বলেছি যে, সংসদে একটা ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। যেই রাজনৈতিক দল জনগণের ভোট পাবে তারা যেন সংসদে থাকতে পারে।
জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মোঃ সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদ খান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, কেন্দ্রীয় নেতা হাসান আল মামুন, এডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, প্রিন্সিপ্যাল আখতারুজ্জামান, শরিফুল ইসলাম, আশিক ইকবাল, রাকিবুল হাসান, তোফাজ্জেল হোসেন, আব্দুর রহমান, আনিসুর রহমান, সোহেল রানা, বাবু খান, জাহাঙ্গীর হোসেন, আশিকুর রহমান, নেওয়াজ খান বাপ্পি, নাজমুল হাসান, মুক্তারুজ্জামান দেলু, বরকত আলী, এডভোকেট আব্দুল খালেক প্রমূখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন।
প্রধান অতিথি বলেন, ৭১এ রক্ত দিয়েছি, ৯০ এ রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি। আমরা আর রক্ত দিতে চাইনা, জীবন দিতে চাইনা। আমাদের মনের মতো বাংলাদেশ আমরা আগামীতে গড়তে চাই, মানের মতো রাষ্ট্র সাজাতে চাই। তিনি বলেন এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে আমরা ঘুনে ধরা ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থা মেরামত করাতে চাই। রাস্ট্র সংস্কার করতে চাই।
তিনি বলেন নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোন অস্থিরতা নাই। নির্বাচন নিয়ে কোন তাড়া নাই। শেখ হাসিনার ১৫ বছরে জালিম শাহী সরকারকে আমরা সহ্য করেছি। এ সরকার যদি দুই এক বছর ক্ষমতায় থাকে তাও আমরা সহ্য করতে পারবো। তবে সরকারকেও জনগণের পালস্ বুঝতে হবে। জনগণের ভাষা বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, শেষ সময়ে এসে সাবেক প্রধান মন্ত্রী ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা মানসিক বিকার গ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সে কারনেই তিনি বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্ট ড. ইউনুসকে জেলে পাঠাতে চাইছিলেন। ক্ষমতায় থাকতে খুনি শেখ হাসিনা বলেতেন তিনি নাকি দেশের মানুষকে খাবার দিতেন, ঘরে ঘরে টেলিভিশন দিয়েছেন, হাতে হাতে মোবাইল ফোন দিয়েছেন। এসব কথা বলে তিনি মানসিক রোগীর মত কর্মকান্ড করেছেন। অথচ পালানোর সময় জুতা পর্যন্ত পায়ে দিতে পারেনি। ক্ষমতার লোভে তিনি মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
ঢাবির সাবেক এই ভিপি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের তাড়া নাই। সরকারকে জনগনের পালস বুঝতে হবে। প্রশাসনে এখনো আওয়ামীদের প্রেতাতœা রয়ে গেছে। দেশের জনগন আস্থা বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের চেয়ারে বসিয়েছেন। যদি চালাতে না পারেন তাহলে রাজনৈতিকভাবে দলগুলোর সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিন। দেশে আর কোন ফ্যাসিবাদের উত্থান আমরা দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, এই সরকারের কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ নেতাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি দিতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।
তিনি আরো বলেন, মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আমরা বার বার হামলার শিকার হয়েছি। এখন মানুষ মুক্ত ও স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারছে। এই পরিবর্তন ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান ও গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় গেলে জেলার চিকিৎসা খাতে উন্নয়ন এবং বেকার শিক্ষিত যুবকদের চাকরী দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে। প্রতিটা বাড়ি থেকে একজন করে চাকরি পাবেন। দেশে কেউ বেকার থাকবে না। অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচন করলে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁনকে ভোট দেওয়ার জন্য আহবান জানান।