মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রায় দুইশ বিশ বছরের পুরনো কুন্ডুবাড়ির মেলা আয়োজনে নানা জল্পনা কল্পনা, বাঁধা আপত্তির পরে তিন দিনের জন্য এ মেলার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রোববার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক উত্তম কুমার দাশ।
এর আগে গতকাল বিকেলে তিন দিনের জন্য কুন্ডুবাড়ির মেলা হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসাঃ ইয়াসমিন আক্তার।
প্রতিবছর কালিপূজাকে কেন্দ্র করে মূলত সপ্তাহব্যাপী কুন্ডুবাড়ির মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।এবারও এ মেলা অনুষ্ঠানের জন্য কালকিনি পৌরসভা থেকে আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ইজারাও প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু এবার স্থানীয় কিছু লোক এই মেলায় আইন শৃংখলা অবনতি সহ বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে মেলা বন্ধ করার জন্য গত ১৬ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালকিনি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন এবছর মেলাটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। পরবর্তীতে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর মেলাটি নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টায় প্রশাসন। যেহেতু মেলাটি শত বছরের ঐতিহ্যবাহী, তাই মন্দির কর্তৃপক্ষ ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ৩ দিনের জন্য মন্দির কমিটির কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মেলা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যা আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে।
কুন্ডুবাড়ি কালি মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যতম সদস্য কালীপদ কুন্ডুর ছেলে স্বপন কুন্ডু বলেন,”প্রতি বছর কালী পূজার সময় ৭ দিন ব্যাপী কুন্ডুবাড়ির মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ক্রেতাদের ভীড়ে কোন কোন বছর তা ১৫ দিন পর্যন্ত চলতো। ১৮০৫ সালে শ্রী শ্রী কালী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে দিপাবলী ও শ্রী শ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে এ মেলার শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের কুন্ডুদের বংশীয় নামানুসারে মেলাটি কুন্ডুবাড়ির মেলা নামে পরিচিতি।এ মেলাটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর একটিতে পরিনত হয়েছে। কালীপূজার সময় হওয়া এ মেলায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন মানুষ আসেন এবং মেলা উপভোগ করেন। কিন্তু এবার মেলা না করার জন্য স্থানীয় আলেম সমাজ আমাদের নিষেধ করেছিল। এলাকায় মেলা বন্ধের কিছু ব্যানারও টানানো হয়েছিল। এতে গত দুইশ বিশ বছরের এ মেলার আয়োজন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। অবশেষে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। অবশেষে তিনি সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে ৩ দিনের জন্য মেলা আয়োজনের জন্য আমাদের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা এখন কালিপূজার পাশাপাশি মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করব।”
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসাঃ ইয়াসমিন আক্তারের বরাত দিয়ে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক উত্তম কুমার দাশ জানান, “দুইশত বছরের বেশি সময় যাবৎ কালিপূজা উপলক্ষে কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা এলাকার কুন্ডুবাড়িতে মেলার আয়োজন হয়ে আসছিল।ইতিপূর্বে মেলাটি কালকিনি পৌরসভা থেকে ইজারার মাধ্যমে আয়োজন করা হতো। কিন্তু এবার ইজারা বাতিল করে মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ দিন মেলা আয়োজন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মেলায় যাতে আইন শৃংখলার অবনতি না হয় সেদিক বিবেচনা করে পর্যান্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। যাতে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের কোন ধরনের অসুবিধা না হয়,এমনকি যারা এখানে দোকানি থাকবেন তারাও যাতে কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকগুলো আমরা নজরে রাখবো।পাশাপাশি মেলা উপলক্ষে কালকিনিতে সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্পও স্থাপন করা হবে।”