শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। ইতিমধ্যে গাছ ঝোঁড়া, পরিস্কার ও নল লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন রস সংগ্রহের কাজ চলছে পুরোদমে। আর রস সংগ্রহ করে তৈরী করছেন ঝোলা ও পাটালি জাতের গুড়। ক’দিন পরেই শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রসও সংগ্রহ হবে বেশি। তাই গাছ থেকে রস সংগ্রহের পাশাপাশি গাছ পরিচর্যাও করছেন তারা।
আর এ কর্মযজ্ঞ চলছে চলনবিল অধ্যূষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের ঝোঁপ-ঝাড়, ভিটে, জমির আইল, রাস্তার ধার ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ গুলোতে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানিয়েছে, উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায়, বসতবাড়ি, পুকুর পাড়ে ও পরিত্যাক্ত ভিটে-ভাটিতে অযন্ত অবহেলায় বেড়ে ওঠা ছোট-বড় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এ গাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ৫০০ মে.টন রস সংগ্রহ হয়ে থাকে। আর ওই রস থেকে তৈরি হয় প্রায় ১৮ থেকে ২০ মে.টন খেজুর গুড়।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায়, বসতবাড়ি, পুকুর পাড়ে ও পরিত্যাক্ত ভিটে-ভাটিতে বেড়ে ওঠা ছোট-বড় খেজুর গাছ গুলোর ডাল পালা পরিস্কার ও নল (চুঙ্গি) লাগানোর পর শুরু হয়েছে রস সংগ্রহ। আর রস থেকে তৈরী করছেন ঝোলা, বাটি ও পাটালি গুড়।
আর এ কাজ স্থানীয় গাছিদের পাশাপাশি রাজশাহী জেলার বাঘা ও চারঘাট, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলা থেকে আসা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গাছির দল। ইতিমধ্যে গাছির দল গুলো উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ভাটি স্থাপন করেছেন। এ ছাড়াও তারা রস থেকে গুড় তৈরীর জন্য জ্বালানী হিসেবে সংগ্রহ করছেন নাড়া (খড়) ও গার্মেন্টের বর্জ্য ঝুট।
রাজশাহীর চারঘাট থেকে আসা গাছি সবুজ হোসেন (৩৫) বলেন, প্রতি বছরই শীতের অাড়াই থেকে তিন মাস এ এলাকায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করা হয়। এ অঞ্চলে খেজুর গুড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে।
তাড়াশ উপজেলার ভাদাশ গ্রামের গাছি মামুন হোসেন বলেন, শীতের শুরুতেই এলাকার খেজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে গাছ প্রতি ৩ কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি গুড়ের বিনিময়ে খেজুর গাছ গুলো লীজ নেয়া হয়েছে। খেজুর রস সংগ্রহ থেকে পাটালী ও ঝোলা গুড় তৈরী করা হয়।
এদিকে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার তুলশীপুর (হরিপুর) গ্রামের গাছি পলাশ হোসেন জানান, এ বছর তাড়াশ উপজেলায় রাজশাহী অঞ্চল থেকে ৩০ থেকে ৩৫ টি গাছির দল এসেছে। আগে মাঠ থেকে খড় সংগ্রহ করে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হত। কিন্তু বর্তমানে এলাকায় জ্বালানীর সংকট থাকায় গুড় তৈরীর জন্য জ্বালানী হিসেবে গার্মেন্টের বর্জ্য ঝুট ব্যবহার করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আগামী ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুর গুড় তৈরী সম্ভব হবে।
উপজেলার রানীরহাটের স্থানীয় গুড় ব্যবসায়ী মছির হোসেন বলেন, সুস্বাদু খেজুর গুড় বাজারে উঠতে শুরু করেছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে খেজুর গুড়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শীত মৌসুমে খেজুরের রস থেকে তৈরীকৃত গুড় সবার কাছেই বেশ সমাদৃত। খেজুর রস থেকে কৃষকের বাড়তি আয় হয়। সে জন্য খেজুর গাছের যত্ন নেয়া প্রয়োজন।