পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার পানি শাখার বকেয়া বিল দাড়িয়েছে প্রায় কোটি টাকা। বকেয়া এ বিলের তালিকায় নাম রয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক কাউন্সিলর সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির। পৌরসভা থেকে বার বার নোটিশ প্রদান সহ মাইকিং করার পরও বকেয়া টাকা আদায় না হওয়ায় শীঘ্রই সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করা সহ আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে পৌর প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, প্রভাবশালীদের কাছে পৌরসভার হোল্ডিং ট্যাক্সও বাকী পড়েছে ৩১ লাখ ৪০ হাজার ২৮৭ টাকা। উন্নয়ন কর্মকান্ড ও জনবল নিয়োগে সাবেক মেয়রদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে এভাবেই ভেঙ্গে পড়েছে পৌরসভার কার্যক্রম। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে শহরের বেশ কিছু সড়ক। ড্রেন-জলাশয় পরিস্কার না করায় বাড়ছে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব। ডাষ্টবিন থেকে যত্র তত্র ময়লা-আবর্জনা সড়কের উপর ফেলে দিচ্ছে গরু-ছাগল। এতে দুর্গন্ধে নাক চেপে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে নাগরিকরা। এছাড়া সড়কে বাতি না থাকায় রাতের শহরে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই। দিনের অধিকাংশ সময় পানি সরবরাহ লাইনে পানি থাকছে না। মেয়র, কাউন্সিলরদের অপসারনের পর থেকে কারো কোন জবাবদিহিতা না থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে পৌরসভার নাগরিক সেবা কার্যক্রম।
পৌরসভার পানি শাখার বিল ক্লার্ক মো. আলমগীর হোসেন জানান, ১ম শ্রেনীর এ পৌরসভার পানি শাখার গ্রাহক সংখ্যা ৪ হাজার ৭ শ’ ২৫। এর মধ্যে ৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার জনপ্রতি ১০ ইউনিট পানি বিল মওকুফ। এছাড়া সংযোগ বন্ধ করা আছে ১৫২টি।
আলমগীর হোসেন আরও জানান, পানি শাখার ৭৪ লাখ ১৪ হাজার ৪’শ ৩১ টাকার বকেয়া বিল আদায়ে আমরা গ্রাহকদের নোটিশ প্রদান সহ শহরে মাইকিং করেছি। দীর্ঘবছর বকেয়া পরিশোধ না করায় ৯টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পরও গায়ের জোরে অবৈধভাবে পানি ব্যবহার করছে কয়েকজন প্রভাবশালী। এদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুব উদ্দিন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মনির বেপারীর দাপটের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।
পৌরসভার পানি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. অলিউল্লাহ জানান, পৌরসভার ৬০০ গ্রাহকের কাছে পানি শাখার বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে। এদের মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মজিবুন নেছা লাভলি বেগমের নামে বকেয়া ৭৮ হাজার ৮শ’ ১৬ টাকা। অধ্যাপক শহিদুল আলমের কাছে ৪৩ হাজার ১’শ ৮৮ টাকা। আওয়ামীলীগ নেত্রী ও সাবেক মহিলা কাউন্সিলর রোজিনা আখতারের স্বামী সবুজ মিয়ার কাছে ২০ হাজার ৩১ টাকা। শিক্ষক নেতা মাহমুদুল আলম পলাশের কাছে ৩৭ হাজার ৬’শ ৪০ টাকা। মো. সিরাজুল হক মুন্সী’র কাছে ৪৩ হাজার ১’শ ৪ টাকা পানি বিল পাওনা রয়েছে।
অলিউল্লাহ আরও জানান, পৌর প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে বকেয়া পাওনা আদায়ে আমরা শীঘ্রই সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করবো। এছাড়া সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও যারা অবৈধ ভাবে পানি ব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
এদিকে খোদ পৌরসভার পানি বিল বকেয়া রয়েছে ১৯ হাজার ৬’শ ৫০ টাকা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মুনসুর আহমেদের কাছে বকেয়া ৩৮ হাজার ৩শ’ ৮৬ টাকা। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে মৃত রুহুল আমিনের কাছে বকেয়া ৫৫ হাজার ৬২ টাকা।
এ বিষয়ে কলাপাড়া পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ’প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বকেয়া পানি বিল ও পৌর কর আদায়ে নোটিশ প্রদান ও মাইকিং কার্যক্রম শেষ। এখন আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মো. রবিউল ইসলাম আরও বলেন, ’শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে গরু-ছাগলের উপদ্রব রোধে খোয়াড় স্থাপনের উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। ###