ঝিনাইদহ পৌরসভার স্টোর কিপার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বনে যাওয়া আসাদুজ্জামান চাঁন গত ১৫ বছরে অনেক অপকর্ম করলেও এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। ছাত্রজনতার ওপর হামলার জন্য অর্থ যোগান দেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের পতন হলেও একচুলও দাপট কমেনি তার।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ১৫ বছরে শহরের চারিদিকে নামে বেনামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার অঢেল সম্পদ। তবে এই সম্পদ তিনি কিভাবে অর্জন করলেন তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই আয়কর অফিসে। পৌরসভার চেক জালিয়াতি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাওয়ায় ঝিনাইদহ শহরবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আসাদুজ্জামান চাঁন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান চাঁন ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রথমে স্টোর কিপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রধান সহকারী ও পদোন্নতি পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই পদে নিয়োগ পেয়ে তিনি পৌরসভার হিসাব শাখায় ছড়ি ঘুরাতে থাকেন। নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগসাজস করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে পৌরসভার একের পর এক ফান্ড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে থাকেন। কিভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা যায় সে বিষয়ে নিয়মিত একাউন্টস সেকশনে এই চক্রের বৈঠক হতো। আর এভাবেই আসাদুজ্জামান চাঁন গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় পৈত্রিক সূত্রে তিনতলা বাড়ির পাশাপাশি বাজার পাড়ায় জমি কিনে গড়েছেন সাততলা বাড়ি। বাড়িটি এখন নির্মাণাধীন। এছাড়াও পাগলাকানাই পূজা মন্দিরের পাশে জমিসহ একটি বাড়ি ও পাগলাকানাই মোড়ে একটি পুকুর কিনেছেন। কাঞ্চনপুর মসজিদের পাশে রয়েছে জমি। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক জমি ও বাড়ির সন্ধান মিলেছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি বাস ও ট্রাক।
জানা যায়, পৌরসভার চেক জালিয়াতির মাধ্যমে পৌরসভার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান চাঁদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি দুদক ঝিনাইদহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, ঝিনাইদহ পৌরসভার বিভিন্ন কাজে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন বিল-ভাউচারের বিপরীতে চেকে অতিরিক্ত অঙ্ক বসিয়ে ও অঙ্ক কথায় লিখে আসল চেকের টাকাসহ অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। আসামিরা বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ঝিনাইদহ পৌরসভার নামে পরিচালিত সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ঝিনাইদহ শাখার হিসাব নং-৩১৬ থেকে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৯ টাকার বিপরীতে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৯ টাকা উত্তোলন করে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ মামলা করা হয়েছে। যা এখনও চলমান।
এছাড়াও, টিআর কাবিখার লাখ লাখ টাকার কোন কাজ না করেই টাকা তুলে নেন সাবেক মেয়র ও চাঁন। টিআর কাবিখার কাজ যে সকল স্থানে হাওয়ার কথা ছিল সেখানে গিয়ে কাজের দৃশ্যমান কিছুই পাওয়া যায়নি। এছাড়াও মিন্টুর আর চাঁন মিলে পৌরসভায় নিয়োগ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, আমরা পৌরসভায় চাকরির জন্য আসাদুজ্জামান চাঁদের কাছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম।
এদিকে পৌরসভায় চাকরি করলেও আসাদুজ্জামান চাঁন আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা। গত ইউপি নির্বাচনে পাগলাকানাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় নৌকার মনোনয়ন দেয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে কেন্দ্র থেকে বাধ্য হয়ে আসাদুজ্জামান চাঁনকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে প্রার্থী করা হয়।
এ ব্যাপারে আসাদুজ্জামান চাঁদ বলেন, আমার পরিবার অনেক আগ থেকেই ধনবান ও সম্পদশালী। এই সম্পত্তি তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। তিনি বলেন, আগামীতে তিনি পাগলাকানাই ইউনিয়ন পরিষদে ভোট করবেন বলে একটি মহল তার বিরুদ্ধে এ সব মিথ্যা রটনা করছে। তিনি পৌরসভার চেক জালিয়াতির বিষয়ে জানেন না বলেও জানান।