শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে ঝিনাইদহের মণ্ডপগুলোতে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছিলেন নারীরা। সিঁদুর খেলা শেষেই শুরু হয় দেবী দুর্গাকে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি।
দুপুরের পর থেকেই ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকার প্রতিমা আসতে থাকে নবগঙ্গা নদীর প্রতীমা বিসর্জন ঘাটে,বিকাল চারটা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন । পাঁচ দিনব্যাপী শারদ উৎসবের শেষ দিন রবিবার (১৩ অক্টোবর) শহরের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকের তালে তালে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছেন বিবাহিত নারীরা। একজন অপরজনের সিঁথিতে সিঁদুর তুলে দিচ্ছিলেন তারা। অনেকে একজন আরেকজনের গালেও লাগিয়ে দিচ্ছিলেন সিঁদুরের রঙ। স্বামীর মঙ্গল কামনায় দেবীর পা ছোঁয়ানো এ সিঁদুর নিয়ে খেলায় মেতে ওঠেন তারা। এ বিষয়ে সিঁদুর খেলতে আসা বৃষ্টি দাশ বলেন,‘স্বামীর দীর্ঘায়ু, সুস্থতা ও সৌভাগ্য কামনায় দুর্গা মায়ের চরণে দেওয়া সিঁদুর মাথায় পরি। সিঁদুর খেলার সময় এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে মনে।’ আরতী দাস পেশায় গৃহবধূ তিনি বলেন,‘সিঁদুরের লাল রং পবিত্রতার প্রতীক। সিঁদুর খেলার মাধ্যমে সেই পবিত্রতা নিজে ধারণের পাশাপাশি অন্যদের মধ্যেও তা বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। এটা একান্তই নারীদের উৎসব। বয়স নির্বিশেষে সব নারীই তাই এ খেলায় মেতে ওঠে।
এর আগে সকাল থেকে শুরু হয় ভক্তদের আরাধনা। দশমী পূজার পর সিঁদুর খেলা শুরু হয়। দুপুরের পর দেবী দুর্গাকে এক বছরের জন্য বিদায় দিতে গিয়ে বিষাদে ভরে ওঠে সবার মন। শহরের চাকলাপাড়া সংলগ্ন নবগঙ্গা নদীর পড়ে গিয়ে চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে দেখা গেছে তাদের।
দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়ার সময় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকেও। এসময় দেবী দুর্গাকে বিসর্জন ঘাট পরিদর্শন করেন,ঝিনাইদহ জেলা প্রসাশক জনাব মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল,উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব রাজিয়া আক্তার চৌধুরীসহ জেলা প্রসাশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
শহরের কৃষ্ণনগর পাড়া গোকুল চন্দ্র সর্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দিরের সভাপতি সঞ্জয় কুমার দাস জনি বলেন, ‘এবারের পূজায় প্রার্থনা করেছি দেশ ও জাতির কল্যাণের। মানুষ যেন সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেই প্রার্থনা করেছি। মানুষের মঙ্গল নিয়ে দেবী আবার আসবেন, সেই পর্যন্ত আমরা অপেক্ষায় থাকব।’ ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা এবং পৌরসভা মিলে এবার প্রায় ৪৩৫ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়েছে। উৎসব চলাকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে দিয়েই উদযাপিত হলো সনাতন ধর্মাবলাম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব।