কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক ১৫ বছরে
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের চারবারের সংসদ-সদস্য শাহরিয়ার আলম (এমপি)। এর মধ্যে দুই দফায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। শাহরিয়ার মূলত ছিলেন ব্যবসায়ী। ২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচন করেন তিনি। তখন হলফনামায় ঋণগ্রস্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ১৫ বছরে অভাবনীয় উত্থান ঘটে। রীতিমতো কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক শাহরিয়ার আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা। সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য-নিশ্চয়ই তার আঙুর ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে ধরা কি সরা জ্ঞান করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে । আঙুল ফুলে কলা গাছ না হলে এমন বিত্তশালী হওয়া কোনোভাবেই একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
অন্যদিকে নির্যাতন, হামলা আর মামলা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কঠোর হাতে দমন করতেন শাহরিয়ার। তার নির্বাচনি এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১৫ বছরের মধ্যে ৭ বছরই জেলে ছিলেন। তার নামে শাহরিয়ারের অনুসারীরা দিয়েছেন ৮৫টি মামলা। শুধু তাই নয়, শাহরিয়ার আলমের বিভিন্ন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও রেহাই পেতেন না। তারা শাহরিয়ারের ক্ষমতা আর দাপটের কাছে মুখ বুজে সকল অন্যায় শয়ে নিরব ভূমিকা পালন করতেন । প্রতিবাদ করলেই চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। ফাঁসিয়ে দিয়ে মামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুর। শাহরিয়ার আলমের সহযোগীদের দেওয়া মামলায় কারাগারে থাকতেন নেতাকর্মীরা। ফলে তারা ছিলেন নিজ এলাকায় ভিনদেশীদের মত ।
সাংবাদিকের অনুসন্ধানে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে উল্লিখিত সব তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নামমাত্র মূল্যে রাজশাহীতে ৬০ কোটি টাকার ৪০ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল নিয়ে গড়ে তোলেন অ্যাগ্রো ফার্ম। কিনেছেন শতাধিক বিঘা আবাদি জমি। ঢাকাতে রয়েছে কয়েকশ কোটি টাকার আটটি পোশাক কারখানা। রাজশাহী এবং ঢাকায় রয়েছে তার কয়েকটি প্লট এবং ফ্ল্যাট। রাজশাহীতে দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রাশিয়া, ব্রাজিল এবং চীনেও রয়েছে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে-দেশের টাকা পাচার করে শাহরিয়ার এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন। গার্মেন্টসের র মেটেরিয়ালস ইমপোর্ট করে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে এখান থেকেও আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা । এছাড়া এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগেও হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। উচুভিটা আবাদি জমিতে সিন্ডিকেট তৈরি করে পুকুরে পরিণত করে এখান থেকেও হাতিয়েছেন কোটি টাকা। এভাবে উল্লিখিত সময়ে হয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগেই অবস্থা বেগতিক দেখে ৪ আগস্ট রাতেই তিনি গা ঢাকা দেন। ইতোমধ্যে শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে তার নির্বাচনি এলাকা বাঘা এবং চারঘাট থানায় আটটি মামলা হয়েছে।বাঘা চারঘাট আসনে তিন প্রকারখানা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও।বেকারত্ব দূরীকরণের কথা বললেও কোনোটিই পালন করেননি তিনি। তার স্বার্থ এবং অর্থ ইনকামের জন্য এলাকার সিন্ডিকেট ব্যবহার করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।