পর্ব-১
শৈলকুপার বিভিন্ন এলাকায় এখনো চলছে রমরমা সুদের ব্যবসা। ঋণ গ্রহীতারা মাস শেষে সুদের টাকা দিতে না পারলে সুদ বাড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে। সেই সুদ দিতে না পারলে মাঠের জমি, গরু, এমনকি বসতভিটা পর্যন্ত লিখে দিতে হয় কারবারিদের নামে। তাঁদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এরই মধ্যে অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সুদের কারবারিরা ঋণ দিয়ে মাসে শতকরা ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত সুদ আদায় করেন। ঋণ দেওয়ার সময় গ্রহীতার কাছ থেকে ব্যাংকের খালি চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে থাকেন। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে খালি চেকে ইচ্ছামতো অঙ্ক বসিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে চাপ দিতে থাকেন। কোনো কোনো মহাজন আদালতে মামলা ঠুকে দেন ঋণগ্রহীতাদের নামে।
কারবারিরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকারের নেতাদের ছত্র ছায়ায় এসকল সুদখোর থাকায় কেউ মুখ খুলতে পারিনি। কিন্তুু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারের পতনের পরে এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে।
উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের হায়দার আলীর অভিযোগ, নলক্ষলা গ্রামের মৃত কাদের শিকদারের ছেলে স্বপনের কাছ থেকে নামমাত্র সুদে ১৫ হাজার টাকা নেন।পরে জোরপূর্বক প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা লাভ নেয় আমার কাছ থেকে।এই ভাবে ১ বছরে ৯৬ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার পরেও আরো ২৬ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার একমাত্র উপার্জন কারি নৌকা জোরপূর্বক খেলাফত মেম্বার, জাফর ও স্বপন মিলে গড়াই নদীর ওইপার পাংশার মাফুজ নামের এক ব্যক্তির কাছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার নৌকা ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।এর পরে ঘাটে আমার আর একটি নৌকা ছিল সেটাও বন্ধ করে রাখে উপায় না পেয়ে আমি নৌকাটি অন্যত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিই।কিন্তু রাতের আধারে ওই নৌকাটি তাঁরা চুরি করে নিয়ে আসে।পরে আমার এই নৌকাটির ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়।এখন আমি সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছি।
হায়দারের পিতা আকামত বিশ্বাস বলেন,স্বপনের কাছ থেকে আমার ছেলে হায়দার ১৫ হাজার টাকা নেয়।প্রতিমাসে ৮ হজার করে টাকা পরিশোধ করে আসছিলো মাসে টাকা দিতে একটু দেরি হলে বাড়ির উপর এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।ওরা আমার ছেলের উপার্জন কারি নৌকাও জোরপূর্বক নিয়ে পাংশা থানার মাফুজ নামের একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। আমি আমার ছেলেকে যারা পথের ফকির করেছে তাদের বিচার চাই।প্রশাসনের কাছে এই অত্যাচারিত স্বপনের বিচার চাই।
একই গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর মন্ডলের অভিযোগ, সুদের কারবারি নলক্ষলা গ্রামের মতিন শিকদারের কাছ থেকে নামমাত্র সুদে ৫ হাজার টাকা নেন।পরে তাকে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে লাভ দিতে বাধ্য করে সুদখোর মতিন।এভাবে দের বছরে ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরেও আরো ৫০ হাজার টাকার দাবি করে।সুদখোর মতিন গত বিশ দিন আগেও লাভের ৫০ হাজার টাকার জন্য বাড়ির উপর এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়।
দিন মুজুর রতন বলেন,আমি অভাবে পরে নলক্ষলা গ্রামের মতিনের কাছ থেকে লাভে করে ১০ হাজার টাকে নিই প্রতিমাসে ৩ হাজার করে টাকা লাভ প্রদান করতে হয়।লাভ বাবদ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও আরো ২০ হাজার টাকার জন্য বাড়ির উপর এসে আমার ছাগলটা নিয়ে যেতে চায় উপায় না পেয়ে শফিকুল এর কাছ থেকে কাজের অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নিয়ে মতিনকে দিই।
এবিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন,রতন আমার বাড়ি কাজ করে একদিন সে হাওমাও করে কান্নাকাটি করে আমার বাড়ি এসে বলে ভাই আমাকে বাঁচা মতিন আমকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে সুদের ২০ হাজার টাকা না দিলে আমার বাড়ির সবকিছু নিয়ে যাবে।আমি বিষয়টি শুনে উপায় না পেয়ে মতিনের হাতে পায়ে ধরে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে মতিনের সুদের টাকা পরিশোধ করি।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শৈলকুপার লনক্ষলা গ্রামের মুকুল শিকদার, হুমায়ন শিকদার, মজনু,গোবিন্দপুর গ্রামের জাফর,বাবলু,শহীদ নগর বাজারের শরিফুল ডাক্তারসহ উপজেলাজুড়ে প্রায় শতাধিক সুদ ব্যবসায়ি সুদের কারবার চালিয়ে গেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বিভিন্ন ভুঁইফোড় সমিতি ও এনজিওর নামেও চলছে সুদের কারবার।
এবিষয়ে সুদে ব্যবসায়ি মতিন বলেন আমি জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে লাভের টাকা নিয়েছি সত্য কিন্তু ওতো টাকা নেয়নি এবং রতনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকায় ৪০ হাজার টাকা নিয়েছি এই টাকা আমার ব্যবসার টাকা।
এবিষয়ে সুদে ব্যবসায়ী স্বপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠো ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সুদি মহাজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।