কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ছিদ্দীকির বিরুদ্ধে বিচারের নামে এক দিনমজুরের টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুরুশকুলের উত্তর হিন্দু পাড়া এলাকার দিনমজুর সুরেন্দ্র দে ও তার ভাই সুধন দে’র মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য খুরুশকুল টাইম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এবং একই সাথে বিএনপি নেতা শাহ আলম ছিদ্দীকির নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত মতে, বিরোধী জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার শর্তে এক লক্ষ টাকা বাজার কমিটির হাতে জমা দেয় ভুক্তভোগী।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দিনমজুর সুরেন্দ্র দে এবং তার পরিবার এখন দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিপন দে জানান, তিনি নিজে সুরেন্দ্র দে’র সাথে মিলে এক লক্ষ টাকা বাজার কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আইয়ুব সওদাগরের হাতে জমা দিয়েছিলেন। পরে জানা যায়, সভাপতি শাহ আলম ছিদ্দীকি সেই টাকা নিয়ে গেছেন। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তারা বারবার শাহ আলমের বাড়ি গিয়েছিলেন। শাহ আলম তাদেরকে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত টাকা ফেরত দেননি এবং জমির রেজিষ্ট্রিও করেননি।
খুরুশকুল টাইম বাজার দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আইয়ুব সওদাগর বলেন,
“সুরেন্দ্র দে’র জমি সংক্রান্ত বৈঠকে আমিও উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সভাপতি শাহ আলমের নির্দেশে সুরেন্দ্র দে আমাকে এক লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিল। পরবর্তীতে সভাপতি সাহেব আমার কাছ থেকে সেই টাকা নিয়ে গেছেন।”
দিনমজুর সুরেন্দ্র দে জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিচারের টাকা ফেরত চেয়েও পাননি। গতকাল ২১ অক্টোবর সাংবাদিকেরা এই ঘটনা নিয়ে তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে শাহ আলম তাঁকে একান্তে মিলিত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। সুরেন্দ্র দে অভিযোগ করেছেন যে, জমি রেজিস্ট্রির নাম করে শাহ আলম তাঁর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়েছেন। টাকা দেওয়ার পরও তিনি জমি পাননি এবং টাকাও ফেরত পাননি।
এ বিষয়ে শাহ আলম ছিদ্দীকি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তিনি কোনো টাকা আত্মসাত করেননি এবং সুরেন্দ্র দে তার জমি ভোগ করছে।
তার দাবি, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন যে, যদি কেউ তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তিনি টাকা ফেরত দিতে প্রস্তুত।
উল্লেখ যে, খুরুশকুল ইউনিয়নে রাজনীতির দখল নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের রাজনীতিই শাহ আলম ও তার ভাই শাহ জাহান চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণে। গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপির নেতা হয়েও শাহ আলম আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। এমনকি ভোটকেন্দ্রেও তিনি বিভিন্ন অনিয়ম চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে একজনের মৃত্যুও হয়েছিল। তার এমন দ্বিচারিতা দেখে স্থানীয়রা বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগের সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শাহ জাহান ছাত্র-জনতার উপর হামলার মামলায় ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।