মাদারীপুরের কালকিনিতে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। ফসলি জমি ছাড়াও পতিত জলাশয় কিংবা পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করে কোনো প্রকার রাসায়নিক ওষুধ ছাড়া সবজি উৎপাদন করছেন তারা। কীটনাশক ছাড়াই উৎপাদন হওয়ায় বিষমুক্ত এসব সবজির চাহিদাও অনেক বেশি। অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় উপজেলার বেশিরভাগ নিচু জমিতে করা হচ্ছে ভাসমান বেডে সবজি চাষ।

কালকিনি উপজেলায় এ-বছর ৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে রমজানপুর ও শিকারমঙ্গল ইউনিয়নে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ৫০ জন কৃষক ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন। পতিত জলাশয় কিংবা পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে জমিতে খুব সহজেই তৈরি করা যায় এ ভাসমান বেড। সরকারি কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে বিঘাপ্রতি এতে খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। একবার বেড তৈরি করলে তার ওপর সারা বছর করা যায় সবজি চাষ। ভাসমান বেডে সবজি চাষ অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে সহজ ও লাভজনক।এখানে লাউ, শসা, করলা, মিষ্টি কুমড়া সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করা যায়।

কৃষক শাহিন রাড়ী বলেন,ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় আমার দেখাদেখি এখন উপজেলার অনেক কৃষক তাদের জলাবদ্ধ জমিতে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেছেন।অল্প খরচে এ পদ্ধতিতে অধিক লাভ পাওয়া যায়।

কৃষক ইউনুস আলী জানান,আমার জমি বছরে ছয় মাসের বেশি সময় পানির নিচে থাকে।এখানে আগে কিছুই চাষ করতে পারতাম না।এখন কৃষি অফিসের সহায়তা ও পরামর্শে ভাসমান পদ্ধতিতে এখানে লাউ,শসা সহ অনেক সবজি চাষ করেছি।ফলন ভালই হয়েছে।আশাকরি লাভবান হবো।

পানির উপর এমন সবজি চাষ দেখতে প্রতিদিনই দুরদুরান্ত হতে লোকজন আসছেন। অনেকে আবার কৃষকের কাছ থেকে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার পদ্ধতি শিখে নিজে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

গোপালপুর এলাকার রাজু আহমেদ বলেন,আমি ভাসমান বেডে সবজি চাষের কথা শুনে দেখতে এসেছি।খুবই ভাল একটি পদ্ধতি এটা।আমি আমার পতিত জয়াশয়ে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করবো।

রাসেল হোসেন নামের আরেক সবজি ক্রেতা জানান,প্রায় প্রতিদিন এখানে এসে সবজি কিনে নিয়ে যাই।বিষমুক্ত তাজা সবজি খেতেও অনেক সুস্বাধু।

কালকিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন,ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী করতে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ,সার,বীজ, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়।এছাড়া কৃষকদের বেড প্রতি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ফলে কৃষকরা দিন দিন এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন,জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চাষাবাদ পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।এখন ভাসমান বেড করে পতিত জলাশয়ে সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হচ্ছে,তেমনি সবজির চাহিদাও পূরন হচ্ছে।

ভাসমান পদ্ধতিতে কম খরচে অধিক ফলন ও সবজির ভালো চাহিদা থাকায় দিন দিন এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।আর বাজারে এসব সবজির দাম ভাল হওয়ায় খুশি এলাকার কৃষকরা।