চট্টগ্রামের ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের উদ্যোগে এবং একশনএইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় আজ কালামিয়া বাজারস্থ পিউর এন্ড ফ্রেশ রেস্তোরাঁর কনফারেন্স রুমে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে একটি অধিপরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস চট্টগ্রামের সাইকোলজিস্ট ধর্মেন্দ্র রায়, বাকলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুচিত্রা, চর চাক্তাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কাশ্মীরি মজুমদার, একশনএইড বাংলাদেশের ইন্সপিরেটর সুইট খান, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের লোকাল রাইটস প্রোগ্রামের ম্যানেজার রিদুয়ানুল হাকিম রিয়াদ, প্রোগ্রাম অফিসার পিকুল দাশ জয়, ইয়ুথ পিয়ার গ্রুপ ফ্যাসিলিটেটর মৌসুমী আক্তার, দৈনিক কালের প্রতিচ্ছবি পত্রিকার প্রতিনিধি রাইসুল ইসলাম, এবং বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সভাটি পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের প্রজেক্ট অফিসার পিকুল দাস জয়।
উদ্বোধনী বক্তব্য
লোকাল রাইটস প্রোগ্রামের ম্যানেজার রিদুয়ানুল হাকিম রিয়াদ বলেন, “বাংলাদেশে ৭২ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে সহিংসতার শিকার হন, তবে মাত্র ১১ শতাংশ নারী থানায় অভিযোগ করেন। বাকিরা সামাজিক ভয়ভীতি এবং পারিবারিক চিন্তাধারার কারণে পুলিশ, নারী অধিকার অধিদপ্তর, বা এনজিওদের সহায়তা নিতে সাহস করেন না।”
প্রেজেন্টেশন ও আলোচনা
যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা ভিডিও ডকুমেন্টেশন এবং স্লাইড প্রদর্শন করে নারী সহিংসতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সাইকোলজিস্ট ধর্মেন্দ্র রায় বলেন, “যদি কোনো নারী সহিংসতার শিকার হন, তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে সিস্টাররা তাকে রিসিভ করবেন এবং ডাক্তাররা কাউন্সেলিং ও প্রয়োজনীয় মেডিকেল পরীক্ষা করবেন। সেন্টারটি তাকে তিন দিনব্যাপী সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট প্রদান করবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “দোষী প্রমাণিত করতে ফরেনসিক টেস্টসহ আইনি সহায়তাও ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে পাওয়া যায়।”
শিক্ষিকাদের ভূমিকা
চর চাক্তাই সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কাশ্মীরি মজুমদার বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে নীতি-নৈতিকতার বিষয়ে আলোচনা করি। শিশুদের মধ্যে ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শ বিষয়ে সেশন পরিচালনা করা হয়। যদি কোনো শিশু বা শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়, তারা আমাদের কাছে নির্দ্বিধায় অভিযোগ করতে পারে।” তিনি আরও জানান, “স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বুথ রয়েছে, যা ছাত্রীদের জন্য খুবই কার্যকর।”
আইনের প্রয়োগ ও পুলিশি সহায়তা
এছাড়া নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক ফোকাল, বাকলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুচিত্রা এবং বলেন, “নারীরা তাদের স্বামীর কাছেও নির্যাতনের শিকার হন, কিন্তু অভিযোগ করতে দ্বিধা করেন। এক চড় বা থাপ্পড়ও সহিংসতা। সরকার নারী সহিংসতায় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে, তবে আমরা পুলিশকে বন্ধু না ভাবার কারণে অনেক সময় অভিযোগ করতে পারি না।”
একশনএইড বাংলাদেশের ইন্সপিরেটর সুইট খান বলেন, “আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সমাজে এখনও এমন ধারণা প্রচলিত যে স্বামীর কিছুটা শাসন স্বাভাবিক। এ ধরনের মানসিকতা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা জরুরি।”
উক্ত সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার সমাধানে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কার্যক্রম পরিচালনার অঙ্গীকার করেন এবং জরুরী পরিস্থিতিতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কমানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও যুব নারীদের সমন্বয়ে স্কুল ও কমিউনিটি পর্যায়ে দু’টি কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটির সদস্যরা দু’ই ওয়ার্ডের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কমিয়ে আমার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে।