ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পাঁচ বছর যাবত একই কর্মস্থলে আছেন বহাল তবিয়তে আছেন উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রতন দাস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন দপ্তরে পরিবর্তন হলেও অপরিবর্তিত হালুয়াঘাট উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রতন দাস। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র মেরামত উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজের দূর্নীতির অভিযোগ হলে তদন্তভার পড়ে রতন দাসের উপর। তদন্ত করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে যোগসাজনে ধামাচাপা দেন দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ।
উপজেলার পশ্চিম পাবিয়াজুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ না করে প্রায় তিন লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে প্রধান শিক্ষিকা আসমাউল হোসনার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এক অভিভাবক অভিযোগ দিলে তদন্তের দায়িত্ব পান রতন দাস। তদন্ত না করে অভিযোগ কারিকে উল্টো হুমকি দেয়া হয় অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রতন দাসের বিরুদ্ধে কথা বললে শিক্ষকতা করা কঠিন। তার সাথে সম্পর্ক রাখলে বিদ্যালয়ে নিয়মিত না গেলেও চলে। রতন দাসের স্ত্রী উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে চাকুরি করেন। তার হাত অনেক লম্বা, উপরে লোক আছে, তা না হলে কিভাবে একই কর্মস্থলে পাঁচ বছর যাবত চাকুরি করছেন।
অভিযোগকারি অভিভাবক আবু সাঈদ বাদশা বলেন, আমার তিন ছেলে পাবিয়াজুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। উপবৃত্তির তালিকায় নাম থাকার পরও উপবৃত্তি পায়নি। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করি। অভিযোগের আলোকে তদন্ত করতে আসেন উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রতন দাস। সকল প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও তদন্ত না করে প্রধান শিক্ষিকা আসমাউল হোসনা স্বামী উপজেলা যুবলীগের নেতা শরিফুল আলমকে সাথে নিয়ে আমাকে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন। অভিযোগ করে এখন আমি বিপদে আছি।
জানা গেছে, সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র খায়রুল আলম ভুঞার আশীর্বাদে উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রতন দাসের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের হাজারো অভিযোগ থাকার পরও উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। এতে সাধারণ শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে বাড়ছে চাপা ক্ষোভ আর হতাশা। প্রশ্ন উঠেছে রতন দাসের খুঁটির জোর কোথায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নিরপেক্ষ কোন অফিসার দিয়ে তদন্ত করলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।
আরেক অভিভাবক মুফিদুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের নাম উপবৃত্তির তালিকায় আছে। এরপরও বৃত্তি পায় না। স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষক আসমাউল হোসনার কাছে জানতে চাইলে সে আমাকে তাড়িয়ে দেয়। তিনি আমাকে বলেন, ময়মনসিংহ অফিসে যান, এমপির কাছে যান, আমি কি করবো। এ দেশে বিচার নাই, টিও এটিও প্রধান শিক্ষক সকলেই এক। তারা সকলেই মিলে এসব দূর্ণীতি করে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেন।
হালুয়াঘাট উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রতন দাস বলেন, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করার কোন সুযোগ নেই, পশ্চিম পাবিয়াজুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করতে গিয়ে ছিলাম। সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন তিনি। এই অভিযোগ সঠিক নয়। আমি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখবেন। আমি এখানে ৫ বছর যাবত আছি, এটা ঠিক। কিন্তু দেড় বছর আগে এখান থেকে বদলি হওয়ার জন্য আবেদন করে রেখেছি।
হালুয়াঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিমা আক্তার খাতুন বলেন, রতন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়। একটি বিদ্যালয়ের তদন্ত নিয়ে সমস্যা হতে পারে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।