ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের ভান্ডাড়ী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে জাতীয় দিবস পালনে অনিহা, শিক্ষকদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা- দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ভান্ডাড়ী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন থেকে চারটি গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে আসছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবার পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বতঃস্ফুর্তভাবে পাঠদানের মাধ্যমে এলাকায় শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।
কিন্তু গত ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে আসাদুর রহমান অত্র বিদ্যালয়ের দ্বায়িত্ব গ্রহণের করার পর থেকেই তার অসংলগ্ন আচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে পড়াশোনা, চাকুরীর পরিবেশ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করায় শিক্ষার মান নিম্নগতিতে ধাবিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ বিগত প্রধান শিক্ষকদের মত পরিলক্ষিত হয় না। প্রায়ই তিনি সহকর্মীদের সাথে অসম্মানজনক আচরণ ও হুমকি দিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়া-শোনার বিঘ্নিত ঘটছে।
এছাড়াও তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রাধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রমের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তার দাম্ভিকতার কারনে তিনি এ ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেন না। এছাড়া জাতীয় দিবস সমুহ পালনে রয়েছে তার বিশেষ অনীহা। যেকোন জাতীয় দিবস নীতিমালা অনুযায়ী এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ ও যথাযথভাবে পালন করেন না।
ভারপ্রাপ্ত প্রাধান শিক্ষক আসাদুর রহমান জাতীয় দিবস১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ, ঈদে মিলাদুন নবী পালন না করে বরাদ্দ কৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অভিযোগ ।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ মামুন বলেন,কম্পোজিট গ্রান্ট বাবদ খরচরের টাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নাম্বারে আসে কিন্তু তিনি একটি টাকাও স্কুলের কাজে খরচ না করে নিজের ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেন।তাই সারা বছর কম্পোজিট গ্রান্টের যাবতীয় খরচ আমাদের বহন করা লাগে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, আমাদের এই স্কুলে কোন জাতীয় দিবসই পালন করা হয় না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদেরও কোনদিন ডাকেন না। নিজের ইচ্ছামত স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। যেহেতু তিনি কোন জাতীয় দিবস পালন করেন না তাহলে তিনি সরকার ও স্বাধীনতা বিরোধী। এজন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা।
ভান্ডাড়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আরিফা সুলতানা বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক সব সময় আমাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন। ভাষা খারাপ করে কথা বলেন। জাতীয় দিবসগুলো ওনি পালন করেন না। পালন করলেও দায়সারাভাবে করে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন। সব সময় মানসিক টর্চারে রাখেন। আর আমরা এর প্রতিবাদ করলে বলে যে বেশি কথা বললে এর প্রতিফলন ভোগ করতে হবে কিন্তু। কথায় কথায় আমাদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেন। আমাদের বেশ কয়েকবার হুমকিও দিয়েছেন। এই স্কুল থেকে তাকে দ্রুত অপসারণ করতে আহবান জানান তিনি।
তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকে স্কুলের লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। তার মত শিক্ষক ও শিক্ষাবিরোধী, স্বাধীনতার চেতনার ঘোরবিরোধী প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করে আমাদের এলাকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভান্ডাড়ী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুর রহমান বলেন, আমি না জেনে বুঝে ভুল করেছি আগামীতে আর ভুল হবেনা।এবিষয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করে সমঝোতার কথা বলেন।
এবিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনান্দ কিশোর শাহা বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইন আনুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আল মামুন, নির্বাহী সম্পাদক : ফোরকানুল হক (সাকিব), ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : সোহাগ আরেফীন,
প্রধান কার্যালয় : ৯২, আরামবাগ ক্লাব মার্কেট, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত