//কক্সবাজার ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আরেক প্রসূতির মৃত্যু: স্বজনদের ক্ষোভ
//শীলার পরে ইমা, এর পরে কে!
//মরিয়ম(২২) কে ৪ ঘন্টার ব্যবধানে একই জায়গায় দু'বার অপারেশন
কক্সবাজার ব্যুরো:
কক্সবাজারের বেসরকারি ইউনিয়ন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে আরও এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে।নিহত মরিয়ম জান্নাত ইমা (২২) রামুর খুনিয়া পালং ইউনিয়নের দারিয়ার দিঘী এলাকার ব্যবসায়ী নেওয়াজ শরীফের স্ত্রী।স্বজনদের দাবি, ত্রুটিপূর্ণ অপারেশনের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ:
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) কক্সবাজার শহরের ইউনিয়ন হাসপাতালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
মরিয়মকে প্রথমে সি-সাইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইউনিয়ন হাসপাতালে রেফার করা হয়। ইউনিয়ন হাসপাতালে একাধিক অপারেশনের পরও তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মৃত্যু হয়।
মরিয়মের পরিবারের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল চিকিৎসার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু হয়েছে। তারা আরও অভিযোগ করেছেন যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে মরিয়মের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়নি এবং যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মরিয়মের বড় ভাই ইমরান জানান, প্রসব বেদনা নিয়ে বুধবার সকাল ১০টায় ডা. ইফ্ফাত সানিয়ার তত্ত্বাবধানে সী সাইড হাসপাতালে ভর্তি হন মরিয়ম। বিকেল ৪টায় তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। ইমরানের অভিযোগ, ডা. ইফ্ফাত অপারেশন সম্পূর্ণ না করেই নার্সকে সেলাই করতে বলে অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে যান। পরিস্থিতি খারাপ হলে মরিয়মকে ইউনিয়ন হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে তাকে ৮ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। রাত ৮টায় আরও একটি মেজর অপারেশন করা হয়। অপারেশন শেষে মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে রাখা হলেও স্বজনদের দেখতে দেওয়া হয়নি। সকালে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
এই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটনায় স্বজনদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। মরিয়মের ভাই ইমরান হাসপাতালের ভুল চিকিৎসাকে মৃত্যুর কারণ বলে দাবি করলেও, মরিয়মের মামা আমিন ইউনিয়ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন।
মরিয়মের চাচা কাজি আবু নাছের মিঠুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের রোগীর অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়নি এবং ভুল চিকিৎসার কারণে মরিয়মের মৃত্যু হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন।
এই মতবিরোধের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি এখনও স্পষ্ট নয়। মরিয়মের মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া:
ইউনিয়ন হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুরুল হুদা জানান, আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রোগীকে ডা. ইফ্ফাত সানিয়ার রেফারেন্সে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় ভর্তি করা হয়। হার্টবিট বেড়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মরিয়মের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।তবে মূল অভিযুক্ত ডা. ইফ্ফাত সানিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে সাংবাদিকরা বক্তব্য নিতে গেলে ইউনিয়ন হাসপাতালের মার্কেটিং অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন সাকিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ হয়ে বলেন, 'সাংবাদিকরা এই বিষয়ে এতো ইন্টারেস্ট কেন?
সিভিল সার্জনের মন্তব্য:
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার জানান, ইউনিয়ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এই হাসপাতালে। আজকের ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূর্ববর্তী ঘটনাঃ
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে একই হাসপাতালে আফসানা হোসেন শীলা নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। সেসময় ভুল চিকিৎসার কারণে প্রসূতির মৃত্যু হলে জনগণ হাসপাতাল ঘেরাও করে ভাঙচুরও চালায়। এছাড়া হাসপাতালের নারী কর্মীদের মধ্যরাতে জোরপূর্বক যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।
সরকারি পদক্ষেপঃ
সাধারণ মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন আ'লীগের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হঠাৎ করে এই বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সেসময় তিনি হাসপাতালের ম্যানেজারকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখতে পান এবং আইসিইউতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করেন। হাসপাতালের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভিযোগে সিলগালা করা হলেও পরবর্তীতে আ'লীগ নেতাদের অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।
সাম্প্রতিক অভিযোগঃ
সম্প্রতি সরকার পতনের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হাসপাতালটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুরুল হুদার লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে হামলার অভিযোগও উঠেছে। এত অভিযোগ ও একাধিক ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি নারীদের মৃত্যুর পরও কেন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন এখন জনমনে।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। তারা সরকারের কাছে দাবি করেছে যে, এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আল মামুন, নির্বাহী সম্পাদক : ফোরকানুল হক (সাকিব), ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : সোহাগ আরেফীন,
প্রধান কার্যালয় : ৯২, আরামবাগ ক্লাব মার্কেট, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত