পিলখানা হত্যাকান্ডের আসামী হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর রবিউল ১৯ দিন চাকরি করে ১৬ বছর জেলে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলেব রবিউল ইসলাম। ভানোর এনএইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি পাশ করে বাবা-মায়ের-স্বপ্ন প-রণে তৎকালীন বিডিআর বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) যোগ দেন। তার মা-বাবাও সেদিন স্বস্তির হাসি হেসেছিলেন। কিন্তু ছেলের চাকরিতে যোগ দেওয়ার ১৯ দিনের মাথায় ঢাকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রবিউলের বাবা-মায়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলার আসামি হন রবিউল। সেই মামলায় তার সাজা হয়। তবে তার বাবা আব্দুর রহমানের বিশ্বাস ছিল যেহেতু ছেলে নির্দোষ, সে এক দিন মুক্তি পাবেই। জমি-জায়গা বিক্রি করে ছেলের মুক্তির জন্য আদালতে চক্কর কেটেছেন দীর্ঘদিন। এক সময় ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দুইমাস আগে মারা যান রবিউলের পিতা।
অবশেষে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় ২৫০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। ২৫০ জনের মধ্যে রবিউল ইসলামও রয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩ জানুয়ারি কারামুক্তি পেয়েছেন রবিউল। তাকে এক পলক দেখার জন্য ছুটে আসেন গত ২৪ জানুয়ারি তার স্বজন সহ আশে পাশে এলাকার লোকজন কিন্তু যে বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর ছেলের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি আর নেই। গত ২ মাস আগে মারা গেছেন। ছেলের জন্য লড়াই করলেও আদরের রবিউলকে শেষবারের মতো দেখে যেতে পারলেন না আব্দুর রহমান।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৬ বছর পর কারামুক্তি পান রবিউল ইসলাম। গত রবিবার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ যে ২৫০ জন বিডিআর সদস্যকে খালাস দিয়েছেন, তার মধ্যে একজন রবিউল ইসলাম।
রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী জানান, রবিউল কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খাওয়া খরচ দেওয়া হতো। কিছুদিন পর পর কাপড় চোপড় কিনে দেওয়া, আদালতপাড়ায় অনেক খরচ করতে হয়েছে। তার পেছনে খরচ করতে করতে পুরো পরিবার প্রায় নিঃস্ব।
রবিউলের দাদি জমেলা বেগম জানান, আমার নাতি বিনা অপরাধে ১৬ বছর জেলে থাকতে হইল। এতদিন বাড়িতে থাকলে বিয়ে হতো বাপ-মা নাতি-পুতির মুখ দেখতে পেতো।
রবিউলের মা সালেহা বেগম বলেন, ১৬ বছর রবিউলের বাবা ছেলের প্রতিক্ষায় থেকে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে মানষিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। দুই মাস আগে মারা যায়। ছেলেকে দেখার ভাগ্যে জুটলো না। তিনি সন্তানসহ সকল বিডিআরের ১৬ বছরের ক্ষতি পূরন ও চাকরি পূর্নবহালের দাবী জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আল মামুন, নির্বাহী সম্পাদক : ফোরকানুল হক (সাকিব), ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : সোহাগ আরেফীন,
প্রধান কার্যালয় : ৯২, আরামবাগ ক্লাব মার্কেট, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত