তরিকুল ইসলাম তুহিন। বেসরকারি উত্তরা ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখায় কর্মরত।সুদর্শন পুরুষ ।সেই সুদর্শন চেহারার ফাঁদে ফেলে প্রেম, বিয়ে, পরকীয়া এবং প্রতারণাই যার নেশা আর পেশা। ফাঁদে ফেলে বিয়ের পর নানা অজুহাতে ডিভোর্স দেওয়ায় তাঁর নিত্যদিনের ঘটনা।
স্কুলজীবন থেকেই তরিকুল ইসলাম তুহিন এলাকায় সুপরিচিত সুদর্শন যুবক হিসেবে। স্কুল থেকেই এলাকায় তার প্রেম-ভালোবাসার আলোড়ন। এরপর ঝিনাইদহে চলে আসে তুহিন।ঝিনাইদহে এসেও সেই পথেই হাঁটা শুরু তাঁর।সুদর্শন যুবক তুহিনের টার্গেট টাকাঅলা নারী।
ঝিনাইদহে এসে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে তাঁর ছাত্রী জাকিয়া সুলতানার সাথে জরিয়ে পরেন অনৈতিক সম্পর্কে। বিষয়টি জানজানি হলে তাঁকে আটকিয়ে রেখে বিয়ে দেয় এলাকাবাসী।
এরপরে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পরিচয় হয় আঙ্গুরা নামের এক যুবতির সাথে। এ সময় আঙ্গুরা সাথে গড়ে তোলেন অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক। বিষয়টি একসময় জানাজানি হলে প্রথম বিয়ে লুকিয়ে প্রতারণা করে বিয়ে করে আঙ্গুরাকে।
বিয়ের পর আঙ্গুরার পরিবার সামাজিক ভাবে মেনে নেয়। কিন্তু ছয় মাস পর বের হয়ে আসে তাঁর আসল চেহারা। তাঁর আগের বিয়ের কথা জানতে পারে আঙ্গুরার পরিবার। বিষয়টি জানার পর আঙ্গুরার পরিবার তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কথা বললে সে হুমকি ধামকি দিতে থাকে।
আঙ্গুরার স্বজনরা জানান, তুহিন তাদের সঙ্গে অনেক প্রতারণা করেছেন।তুহিন আমাদের মেয়ে আঙ্গুরাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তাঁর আগের বিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে।আমাদের না জানিয়ে আমাদের মেয়েকে বিয়ে করে সে তাদের মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। এ ছাড়া তুহিন তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
তুহিন ২০১৪ সালে আগের দুই বিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করেন শৈলকুপা পৌরসভার মাহবুব জোয়ার্দারের মেয়ে মুন্নী মেহেবুবাকে। বিয়ের পর থেকে মুন্নীকে নানা ভাবে নির্যাতন করতে থাকে।ঢাকায় চাকুরী করা অবস্থায় তুহিন তাঁর সহকর্মী রোমা কাজীর সাথে গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পর্ক। রোমা কাজীর ভিডিও ধারণ করে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা মানসম্মানের ভয়ে মুখ খুলেননি তিনি।অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে এ সকল তথ্য। এবিষয়ে তাদের পারিবারিক জীবনে শুরু হয় ঝামেলা। পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার শিক্ষিকা প্রপার সাথে গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পর্ক সেখান থেকেও হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা এমনটায় অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।মানসম্মানের ভয়েও মুখ চেপে গেছেন তিনি। অনুসন্ধানে এক এক করে বেরিয়ে আসছে তাঁর সকল অপকর্ম।
পরবর্তীতে মুন্নী জানতে পারে তাঁর আগের দুই বিয়ের কথা জাঁকিয়া সুলতানা ও আঙ্গুরার কথা কিন্তু সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি পরিবারকে না জানিয়ে সব কিছু মুখ বুঝে মেনে নেন। কিন্তু তাঁর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় তাঁর পরেও দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করতে থাকে।
কিন্তু হঠাৎ ২০২৪ সালের পরিকল্পনা করে ঢাকাতে গ্রামে পাঠিয়ে দেন তাঁর স্ত্রী মুন্নী সহ তাঁর ছেলে মেয়েকে। ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে ডিভোর্স দিয়ে তাঁর সাথে সংসার করতে থাকেন। কিন্তু ডিভোর্স দেওয়ার পরেও কিভাবে সংসার করলেন তিনি প্রশ্ন মুন্নীর পরিবারের।
২১শে ফেব্রুয়ারী পরিকল্পনা করে গ্রামের বাড়ি রাজনগর থেকে মুন্নীকে মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেয় তুহিনসহ তুহিনের পরিবার। জখম
অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে তাঁর পরিবার শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।এ বিষয়ে একটি মামলা করে মুন্নীর পরিবার। মামালা চলাকালীন মুন্নির পরিবারের মামলা তুুলে নিতে হুমকি ধামকি দেয় তুহিনের বড় ভাই বিএম ফারুক আহম্মেদ।
তুহিন প্রথমে চোখাচুখি, মাখামাখি। তারপর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে কেটে পড়া অথবা ওই প্রেমিকার নামে বদনাম ছড়িয়ে হেনস্তা করাই ছিল তুহিনের কাজ। এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে তুহিনের দুটি তালাকনামার কপি। যার একটি তুহিন দিয়েছেন জাকিয়া সুলতানা নামের এক নারী যাকে সে বিয়ের আগে প্রাইভেট পড়াতেন। অন্যটি তাঁর সহপাঠী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আঙ্গুরা যাকে জাকিয়া সুলতানার সাথে বিয়ের বিষয় লুকিয়ে বিয়ে করে।
তুহিনের বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে। জানা যায়, একাধিক প্রেম পরকীয়া ও বিয়ে করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে তুহিনের প্রধান লক্ষ্য।
জতুহিনের এলাকাবাসী জানান, কতোগুলো বিয়ের কথা বলবো ছেলেটা একের পর এক বিয়ে করে ডিভোর্স দিয়ে দেয় এটায় তাঁর নেশা।তাঁর সম্পর্কে অনেক অভিযোগ সে নারীদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী পরকীয়ায় জরিয়ে পরে।
কাগজে-কলমে তিনটি বিয়ের সন্ধান পেলেও তুহিনের পরকীয়া প্রেমের ঝুলি বেশ ভারী।তুহিনের তৃতীয় স্ত্রী জানান, বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীর আগে আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল। আর তার সঙ্গে বিয়ের পর ছিল একাধিক পরকীয়া।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় তুহিনের সঙ্গে। তুহিন জানান, তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট।স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর আমি মিমাংসা করে নিতে চেয়েছিলাম। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানান তুহিন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ উপ-পরিদর্শক সম্রাট মন্ডল জানান,সরজমিনে তদন্ত করে বিএম ফারুকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছেন তাঁরা।
