ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ৫নং দেওখোলা ইউনিয়ন পরিষদের নাম মাত্র ভোট দেখিয়ে নির্বাচিত ফরিদা ইয়াসমিন নিশি। তিনি ফুলবাড়ীয়া আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৫ নং দেওখোলা ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান মৃত আলহাজ্ব তাজুল ইসলাম বাবলু’র স্ত্রী। নিশি নিজেও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য।
গত ৫ আগস্টের আগে ক্ষমতার দাপটে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্ধের ৫% কাজও করেনি। কিছু কিছু জায়গায় কাজই হয়নি শুধু উত্তোলন করা হয়েছে বিল। পেক্ষাপট পরিবর্তনের পরও অদৃশ্য অসাধু কর্মকর্তা ও লোকজেনর কারনে তার দাপট কমছেনা বলে বন্তব্য করেন স্থানীয়জনগণ।
যার ফলে ২৪-২৫ অর্থ বছরের দেওখালা ইউনিয়নের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় ২০ লাখ ২৭ হাজার টাকার রাস্তা পূর্ণ নির্মান বরাদ্ধের প্রায় ১৮ লাখ টাকাই আত্মসাৎ করার চেষ্টা। এতে অর্ধেক বিল উত্তোলন করেছেন বা যদি কোন প্রকল্পের বিল বাকি থাকে সেটা উত্তোলন করতে পারবেন বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
৫নং দেওখোলা ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন নিশি গ্রামীণ অবকাঠামো (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় কুকরাইল বটতলা হতে জামে মসজিদ ভায়া সুরুজের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণ ৩ লাখ ২ হাজার টাকার কাজে ১৬০ ফুট করে প্রতিটাক ১৮শত টাকা করে ১৭ ট্রাক মাটি দিয়ে কাজ শেষ করেন তাতে খরচ হয় ৩০ হাজার ৬শত টাকা আত্মসাৎ করেন ২ লাখ ৭১ হাজার ৪শত টাকা। দেওখোলা কালাম মাহজনের বাড়ি হতে শুভরিয়া পাকা পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার কাজে ১৬০ ফুট করে প্রতিটাক ১৬ শত টাকা করে ১৮ ট্রাক মাটি দিয়ে কাজ শেষ করেন তাতে খরচ হয় ২৮ হাজার ৮শত টাকা আত্মসাৎ করেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ২শত টাকা। শুভরিয়া পাকা রাস্তা হতে হরমত খলিফার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুননির্মাণ ৩ লাখ টাকার কাজে ১৬০ ফুট করে প্রতিটাক ২ হাজার টাকা করে ১৩ ট্রাক মাটি দিয়ে কাজ শেষ করেন তাতে খরচ হয় ২৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। রাস্তা মেরামত বাবদ ২০ লাখ ২৭ হাজার টাকার কাজে ব্যয় করেছেন মাত্র ২ লাখ টাকা বাকি ১৮ লাখ ২৭ হাজার টাকাই আতৎসাত করবেন বলে পায়তারা করছেন।
এছাড়াও গত ২৩-২৪ অর্থ বছরে কর্মসৃজন কর্মসূচীর ৫% কাজ না করেই অর্থ হাতিয়ে নিছেন বলেও জানা গেছে।
ফরিদা ইয়াসমিন নিশি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অর্থবছরে অসহায় ও দরিদ্রদের বাদ দিয়ে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্ডের বিতরণ করেছেন। কিছু কার্ড ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করেন। তবে কার্ড অনলাইন করার সময় সেসব নাম না রেখে নিজের পছন্দমতো নাম বসিয়েছেন। সরকারি নিয়ম না মেনে অর্থের বিনিময়ে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবমারসিবল (নলকূপ) বিতরণ করা হয়।
সাবমারসিবল দেয়ার কথা বলে এলাকার জনগণের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিছেন। এমনকি সাবমারসিবল প্রার্থীর কাছ থেকে আইডি কার্ড সংগ্রহের সময় আইডি কার্ডের পেছনে টাকা জমা ও বাকী টাকা উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য অফিসে জমা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড মিলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাকা দিয়েও বছরকে বছর গুরতে হচ্ছে। টিসিবির কার্ড নিয়েও হয়েছে পুকুর চোরি, তার পরিবারের কাছে ১৫ টি থাকলেও বিভিন্ন গ্রাহকের কাজ থেকে নিয়া হয়েছে টাকা। টাকা না দিলে মিলেনি টিসিবির কার্ড। ভিজিডি কার্ড ব্যবাপারে জানতে গেলে ধনি ব্যক্তিদের কাছেই আছে শত শত কার্ড যা অর্থের বিনিময়ে বিতরণ হয়েছে। টেক্সের টাকা ও ১% এর টাকার কোন হিসেবে দিতে পারবে না চেয়ারম্যান। টেক্স ১০ টাকা হলে অফিসে দেখানো হয়েছে ২ টাকা দাবী জনগনের ।
বিগত দিনে এলজি এসপি কাজেও দুর্নীতির কমতি নেই। কাজ না করেই তুলেছে বিল। করেছেন টাকা আত্মসাৎ রয়েছে প্রশাসনের নিরব ভ’মিকা। একই জায়গা বার বার দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ট্যাক্স উত্তোলন করে সরকারের কোষাগারে কিছু জমা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ, জন্মনিববন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সের টাকার কোন হিসেবে নাই। বিভিন্ন সনদ দিতে সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা আদায়, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করিয়ে অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা না করে ইউপি চেয়ারম্যানের নিজে ব্যয় করার অভিযোগও রয়েছে অনেক। একজন আওয়ামী চেয়ারম্যান হয়ে এত সাহস পায় কোথায় প্রশ্ন জনগনের।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক কাচা রাস্তা আছে। যে গুলো একটু বৃষ্টি আসলেই হাটা যায় না। কোন কাজ আসলেই দেখা যায় ঘাস চেচে উপরে ফেলে। তাহলেই দেখা যায় রাস্তায় কাজ হয়েছে। এমন করেই বলছে বছরকে বছর। ৫ আগস্টের পরও এমন করে কাজ করে এত সাহস পাইলো কই থেকে আমাদের জানতে ইচ্ছে করে।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন নিশি কাছে জানতে চাইলে নিজের কাঁধে দোষ না নিয়ে মেম্বারদের দায়ী করেন বলেন, আমি প্রকল্প আসলেই সকল মেম্বারদের মাঝে ভাগ করে দেই। মেম্বারা প্রকল্পের চেয়ারম্যান। তারা যদি কাজ না করে আমি কি করবো। আমি চেষ্টা করি তারা যেন কাজ করে কিন্তু তারা আমার কথা শুনে না।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের কাজের অর্ধেক টাকা অগ্রীম দিতে হয়। তাই দিয়েছি। প্রকল্পের কাজ না করলে পরবর্তী বিল দিবো না। যদি দেয়া টাকা থেকে কাজ কম করে তাহলে টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য চিঠি দিবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, আমি প্রকল্পের তালিকা ফেইসবুকে দিয়েছি মানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে ছাড় নয়।