ঢাকামঙ্গলবার , ২৭ মে ২০২৫
  1. অপরাধ
  2. আজ দেশজুড়ে
  3. আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরো
  6. কবিতা
  7. কৃষি সংবাদ
  8. ক্যাম্পাস
  9. খাদ্য ও পুষ্টি
  10. খুলনা
  11. খেলাধুলা
  12. চট্টগ্রাম
  13. ছড়া
  14. জাতীয়
  15. জীবনযাপন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিজয়নগরে লিচুর বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে তৃপ্তির হাসি

Link Copied!

নবীনগর রিপোর্টার্স ক্লাবের সম্মানিত সভাপতি শাহীন রেজা টিটু ভাই এবং সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকের নেতৃত্বে ক্লাবের সকল সদস্যদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর লিচু বাগানে ঘুরে আসেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি মৌসুমে রসালো ফল লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে লিচু চাষিদের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় বেচা-বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। বিজয়নগর উপজেলার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর সুনাম ও খ্যাতি।

এদিকে লিচু বাগানে প্রতিদিন শত শত মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসছে। এ যেনো এক উৎসবের আমেজ। কেউ আবার শখ করে লিচু বাগানে ছবি তোলা দিয়ে ব্যস্ত, কেউ লিচু গাছ থেকে লিচু পারা নিয়ে ব্যস্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৫৬৮ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। জেলায় ১ হাজার ২০০টি ছোট-বড় বাগানে এবার ৫৬৮ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ করা হয়েছে।

এবার চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হবে। হেক্টর প্রতি প্রায় ৫.১০ টন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য ৪৩ কোটি টাকা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। জেলায় সীমান্তবর্তী বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় বেশি লিচুর চাষ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এখানকার ধানি জমি গুলোকেও লিচু বাগানে পরিণত করতে থাকেন চাষিরা।

বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলায় পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় প্রায় চার শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে দেশি লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়।

এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি লিচু গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেকেই বাড়িতে অন্যান্য ফলের গাছের সাথে লিচু গাছ লাগান।

এলাকাবাসী ও চাষিরা জানান, লিচু গাছে মুকুল আসার পর থেকে কয়েক দফা বাগান বিক্রি হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর প্রথমে বাগান কিনেন স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনরা। গুটি একটু বড় হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় হলে চতুর্থ দফায় বাগান বিক্রি হয়।

বিজয়নগর উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হচ্ছে আউলিয়া বাজার। এছাড়াও উপজেলার মেরাশানী, মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল বাজার, আমতলী বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজারে পাইকারীভাবে লিচু বেচা-কেনা হয়। প্রতিদিন ভোর রাত ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এসব বাজারে লিচু বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন উপজেলার আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রায় ২০-২২ লাখ টাকার লিচু বেচা-কেনা হয়।

এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কিনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার আউলিয়া বাজারসহ অন্যান্য বাজারগুলোতে বর্তমানে প্রতি হাজার দেশি লিচু ২ হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা, প্রতি হাজার এলাচি ও চায়না লিচু ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, পাটনাই ও বোম্বাই লিচু ২ হাজার ২০০ থেকে ২৫০০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউপির মহেশপুর গ্রামের লিচু চাষি মাসুদুল হাসান বলেন, প্রথম থেকে গাছের পরিচর্যা করে আসছি। গাছে মুকুল আসার পর থেকে গাছের নিচে কীটনাশক ও পানি দিতে হয়। এবার আবহাওয়া একটু বিরূপ ছিল। বৃষ্টি হলে আরেকটু ভালো লিচু হতো, তবে তারপরও বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এবছর ৩ কানি জমিতে ৬০ টা গাছে লিচু চাষ করা হয়েছে। লিচু আবাদ করতে তার ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটা গাছে লিচু ভালো আসায় প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা সম্ভব হবে। গত বছর সে ৯ লাখ টাকা লিচু বিক্রি করে।

তিনি আরো জানান, আগামীতে আরো বেশি জমিতে লিচু আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। গাছ সম্পর্কে তার আগে থেকে ভালো জ্ঞান রয়েছে, তাই গাছের পরিচর্যা কখন কী করতে হয় সেটা তার অবগত আছে। এখানে লিচু কোনো রকম ফরমালিন দেওয়া হয় না, একদম প্রাকৃতিক।

তিনি আরো জানান, তাকে দেখে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে। উৎসাহিত সকলকেই তিনি সাহায্য করছেন।

একই গ্রামের লিচুর চাষি রমজান ইসলাম জানান, তার দুইটা বাগানে ৩০ লিচু গাছ আছে। গত ১০-১২দিন ধরে তিনি আউলিয়া বাজারে লিচু বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি। এ বছর প্রচুর গরমে লিচু অনেক নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে আরো ভালো ফলন হতো, তার পরেও ভালো ফলন হয়েছে। তার বাগানে যে পরিমান লিচু আছে আরো ৭-৮ দিন বিক্রি করতে পারবেন।

ভৈরবের লিচুর পাইকার শাহ আলম জানান, গত ৫ দিন ধরে তিনি বাজারে ও বাগানে আসছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় লাখ টাকার লিচু তিনি কিনেন। এখানকার লিচু ভালো ও মিষ্টি হওয়ায় লিচু বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। এখানের লিচুর বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে।

জেলার কসবার ব্যবসায়ী কালু হোসেন জানান, গত পনের দিন ধরে তিনি আউলিয়া বাজার সহ বিভিন্ন বাগানে আসছেন। প্রতিদিন তিনি গড়ে প্রায় লাখ টাকার লিচু কিনেন। লাভ একটু কম হলেও এখানকার লিচু অনেক ভালো ও মিষ্টি হওয়ায় চাহিদা থাকে বেশি।

বিষ্ণুপুর ইউপির মহেশপু লিচু বাগানে ঘুরতে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দা বুলেট মিয়া জানান, সব সময় আমি লিচু বাগানে আসি। এবার পরিবার নিয়ে এসেছি। লিচু বাগান থেকে নিজ হাতেরলিচু পেরে খাওয়া এক অন্য রকম অনুভূতি।

রিভা সাহা জানান, প্রতি বছরই ফেসবুকে বিভিন্ন জন লিচু বাগানে ঘুরতে যাওয়ার ছবি দেয়। আমার স্বামী প্রবাসী। এবার স্বামী দেশে থাকায় স্বামীকে নিয়ে এই প্রথম লিচু বাগানে ঘুরতে আসছি। এসে নিজের মত করে বাগানে ছবি তোলছি। এসে মনে হচ্ছে আগে কেনো আসেনি। এ যেনো প্রাকৃতির এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বাসিন্দা লিটু, সোহাগ বলেন, প্রতি বছরই পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বাগানে ঘুরতে আসি। এবারও বন্ধুরা মিলে মোটরসাইকেল যোগে বাগানে ঘুরতে আসছি। বাগান থেকে লিচু পেরে খাওয়া ও কিনার মজাই আলাদা।

তিনি আরো বলেন, বিজয়নগর পাহাড়ি এলাকা হওয়াতে আম, কাঁঠালে ও লিচুসহ বিভিন্ন ফলের বাগানের কারণে এখানের পরিবেশ যেনো এক অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে তোলেছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলায় লিচুর বেশি আবাদ হয়। এখানকার মাটির গুণাগুণ ভালো হওয়াই প্রতিবছর বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, জেলায় ১ হাজার ২০০টি ছোট-বড় বাগানে এবার ৫৬৮ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ করা হয়েছে। এবার চলতি মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য ৪৩ কোটি টাকা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। প্রতি বছরই লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করা হয়। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিঃ দ্রঃ - বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।