পবিত্র ঈদুল আযহার দীর্ঘ ছুটিতে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ভীড় জমাতে শুরু করেছে পর্যটক দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন পর্যটক না থাকলেও ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকেল থেকে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়। তবে ঈদের তৃতীয় দিনে হাজারো পর্যটক দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকত। আগামীকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক দর্শনার্থীদের আগমনে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করবে সৈকতে। এমন ভীড় থাকবে আগামী শনিবার পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
রোজার ঈদের ছুটির পর দীর্ঘ পর্যটক খড়া চলছিল। সেই খড়া কাটিয়ে ঈদুল আযহার টানা ১০ দিনের ছুটিতে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে পর্যটননির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোতে। ইতোমধ্যে আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গুলোর ৭০-৮০ ভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার)থেকে শতভাগ বুকিং রয়েছে।
আজ সোমবার (৯ জুন)ঈদের তৃতীয় দিন দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো সৈকত এলাকা। প্রচন্ড রোদ ও গরমে একটু প্রশান্তির পরশ পেতে সমুদ্রে ঝাপিয়ে পরছেন আগত পর্যটকরা। কেউ উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের তালে তালে নেচে গেয়ে নিজের ভিতরে থাকা শিল্পত্বকে একটু ঝালিয়ে নিচ্ছেন। সমুদ্রে হই হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। কেউবা আবার ওয়াটার বাইক ও স্পীড বোর্ডে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ান।
অনেকে প্রিয়জনকে নিয়ে সেলফি তুলে স্মৃতির এ্যালব্যামে রেখে দিচ্ছেন। সৈকতে খেলাধুলা সহ আনন্দ উল্লাসের যেন শেষ ছিল না। কেউবা বেঞ্চিতে বসে সমুদ্রের তীড়ে আছরে পড়া ঢেউ সহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
তবে শিশুদের আনন্দ উল্লাসের মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল। পরিবারের সাথে সমুদ্রে গোসল, বালুর পিরামিড তৈরি, ঘোড়ায় চড়ে সৈকতের এদিক থেকে ওদিকে ঘুরে বেড়ানো যেন আনন্দের সীমা নেই।
আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি রাখাইন বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রিপাড়া তাতঁ পল্লী, তিন নদীর মোহনা, গঙ্গামতি লেক, লাল কাঁকড়ার চর, ঝাউবন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে বেড়িয়েছেন।
পর্যটক দর্শনার্থীদের ভীড়ে বিক্রি বেড়েছে শামুক ঝিনুক, বার্মিজ আচারের দোকান সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। খাবার হোটেল গুলোতেও লক্ষনীয় ভীড় দেখা গেছে। ঈদুল আযহার দীর্ঘ ছুটিকে ঘিরে শত কোটি টাকার কেনাবেচার প্রত্যাশা রয়েছে ব্যবসায়ীদের।
আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও রেইস কিউ টিম নিয়ে রয়েছে সৈকত এলাকায়।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক মাহবুব আলম বলেন, ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছেন। কক্সবাজার বাজার বাড়ির কাছে সেখানে তো প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া হয়। তাই এবার ঈদের ছুটিতে ছেলে মেয়েরা এখানে এসেছি।
তিনি বলেন, কুয়াকাটা অনেক সুন্দর একটি জায়গা। এখানকার সৌন্দর্যে কক্সবাজারের চেয়ে একটু ভিন্নতা রয়েছে। সমুদ্রে গোসল সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। খুবই আনন্দ উপভোগ করছেন ছেলে মেয়েরা।
ঢাকা থেকে আসা মাহফুজা মৌ বলেন, ঈদের ছুটি উপভোগ করতে গতকাল রাতেই কুয়াকাটা এসেছি। কুয়াকাটার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখেছি। সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত সহ বিভিন্ন স্পটে ঘুরেছি। অনেক ভালো লেগেছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহীম ওয়াহিদ বলেন, আজকে আমাদের হোটেল হোটেলে গুলোর বেশির ভাগ কক্ষই বুকিং রয়েছে। ১০-১১ জুন থেকে শতভাগ বুকিং আশা করছি।
কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শাহাদাত হোসেন বলেন, আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার আমরা প্রস্তুত আছি। গোসলের সময় পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের দূর্ঘটনার শিকার না হয় সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। সার্বক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম রেইস কিউ টিম সমুদ্র সৈকত এলাকায় রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলোতে পোশাক পরিহিত ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রতিকার ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।