রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাচালং সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।ইাতমধ্যে তার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম ও বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন বাঘাইছড়ি উপজেলার পুরাতন মারিশ্যার বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ হাসান আলী।
জানাযায় অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের করে মানুষকে হয়রানী করছে । বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে বিপুল সম্পদ গড়েছেন এবং আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘ সময় যাবৎ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অপকর্ম করেছেন।
অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট হাসান আলী বলেন, "সিরাজ মাস্টার একজন আওয়ামীপন্থী একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণ করতেন। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতেন।"তিনি আরও বলেন, "সিরাজ মাস্টার শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করতেন এবং অন্যের জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে জবরদখল করেছেন। তাকে গত ১০ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের কমিটিতে আজীবন সদস্য করা হয়, যা সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণবিধির লঙ্ঘন। একজন সরকারি স্কুলের শিক্ষক কখনোই সাংবাদিকতা করতে পারেন না কিংবা কোনো প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য হতে পারেন না।"স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, "সিরাজ মাস্টারের নিজ বাড়ির জায়গার পরিমাণ ২৬৮.৫৮ বর্গমিটার বা ২৮৯১ বর্গফুট, অথচ তিনি জবরদখল করে রয়েছেন ৫৭৮.৭ বর্গফুট জায়গা। দেখা গেছে, নির্মিত ভবনের আয়তন ১০০০ বর্গফুটেরও বেশি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী জবরদখলীয় অংশ বাদ দিয়ে অনুমোদিত নির্মাণ হওয়ার কথা আনুমানিক ৩০০-৩৫০ বর্গফুট।" ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সিরাজুল ইসলাম আবার রাজনৈতিক রং বদলিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে বিএনপির নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছেন।
অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ হলো, তিনি তার অপছন্দের ছাত্র-ছাত্রীদের টেস্ট পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দিতেন। যেসব শিক্ষার্থী তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতো, তাদের টেস্ট ও অন্যান্য পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিতেন। আর যাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতো, তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ফরম পূরণ করাতেন।
তিনি বাঘাইছড়ি বাইতুশ শরফ কমপ্লেক্সের পরিচালনা পর্ষদে দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয়দের তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে এখনো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু বাইতুশ শরফ নয়, তিনি স্কুলে সময় না দিয়ে নিয়মিতভাবে ডেবাপাড়ার জামে মসজিদে সময় দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরও এক ভয়াবহ অভিযোগ হলো, তিনি মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা নিরীহ ও নিরপরাধ যুবক সাদ্দামের মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। অভিযোগ অনুযায়ী, সিরাজুল ইসলাম প্রশাসনের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাদ্দামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন, যার ফলে সাদ্দাম অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন এবং শেষ পর্যন্ত তার অকাল মৃত্যু ঘটে। ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এতদিন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, সিরাজ মাস্টারকে স্বপদে বহাল রেখে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা সম্ভব নয়। তিনি আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা কে ঢেলে সাজিয়ে রেখেছেন । এতে করে প্রশাসনের প্রতি স্তরে তার নিজস্ব লোক রয়েছে ।ফলে যারাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতো তাতে কোন কাজ হতো না । সব কিছু থেকে রেহাই পেয়ে যেতেন। স্থানীয়রা চান, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত পরিচালনা করা হোক।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম থেকে যাকে তদন্তকারী কমকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হযেছে তিনি তার পূব পরিচিত। এক সময় তিনি বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কমরত ছিলেন । সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার, যিনি পূর্বতন সরকারের সময়ে আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিরিন আক্তারের সঙ্গে সিরাজুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এবং তিনি বিভিন্নভাবে তাকে সহায়তা করছেন। ফলে শিরিন আক্তারকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তারা শঙ্কা করছেন, তদন্ত যদি সাবেক এ ইউএনও শিরিন আক্তারের মাধ্যমে তদন্ত পরিচালিত হয়, তবে আওয়ামীপন্থী সিরাজুল ইসলাম আবারও পার পেয়ে যাবেন।
অভিযোগকারী আরও জানান, "নিরপেক্ষ ও সুষ্ট তদন্ত পরিচালিত হলে সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের সকল দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র বেরিয়ে আসবে।"
সম্পাদক ও প্রকাশক : আল মামুন, নির্বাহী সম্পাদক : ফোরকানুল হক (সাকিব), ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : সোহাগ আরেফীন,
প্রধান কার্যালয় : ৯২, আরামবাগ ক্লাব মার্কেট, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত