ঢাকামঙ্গলবার , ২৪ জুন ২০২৫
  1. অপরাধ
  2. আজ দেশজুড়ে
  3. আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আরো
  6. কবিতা
  7. কৃষি সংবাদ
  8. ক্যাম্পাস
  9. খাদ্য ও পুষ্টি
  10. খুলনা
  11. খেলাধুলা
  12. চট্টগ্রাম
  13. ছড়া
  14. জাতীয়
  15. জীবনযাপন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি শৈলকুপার ইলা মিত্র

খুলনা ব্যুরো-
জুন ২৪, ২০২৫ ১:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি ইলা মিত্রের বাড়ি
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় কুমার নদের পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম, নাম বাগুটিয়া। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানে না তাদেরই গ্রামের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এমন একজন বিপ্লবী, যাকে নিয়ে গর্ব করে সমগ্র বাংলা তথা ভারত উপমহাদেশ।

ইলা মিত্র (১৮ অক্টোবর ১৯২৫ – ১৩ অক্টোবর ২০০২) একজন ভারতীয় বাঙালি মহীয়সী নারী এবং সংগ্রামী কৃষকনেতা। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম, উপনিবেশিক পাকিস্তানবিরোধী কৃষক-গণআন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই বিপ্লবী নেত্রী অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মূলত তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করেছেন। যিনি অধিকার বঞ্চিত গণমানুষের বিপ্লব ও সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। যার পর্বপুরুষের বসত ভিটে এখনো রয়েছে এই গ্রামে। এমনকি অধিকাংশ মানুষ জানে না, কখনো শুনেনি ‘ইলা মিত্রের’নাম!

এই বাড়িতেই শৈশব কাটিয়েছেন ইলা মিত্র। গ্রামটির একটি প্রান্তে মাঠের মধ্যে ঘন জঙ্গলের ভেতর রয়েছে পাশাপাশি দুটো পুরনো বাড়ি। এলাকায় বাড়ি দুটোর একটি হাজী কিয়ামউদ্দীনের বাড়ি এবং অন্যটি হাফেজ সাহেবের বাড়ি নামে পরিচিত। হাজী এবং হাফেজ উভয়েই প্রয়াত, ফলে বাড়ি দুটোতে এখন বাস করে তাদের উত্তরাধিকারীরা। তারাই এই বাড়ি এবং সংলগ্ন কয়েকশত বিঘা সম্পত্তির মালিক।
হাজী কিয়ামউদ্দীনের এই বাড়িটিতেই একদা বাস করতেন নগেন্দ্রনাথ সেন (এলাকার প্রবীণদের কাছে নগেন সেন নামে পরিচিত) ও মনোরমা সেন দম্পতি।  নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বাংলার একাউন্ট্যান্ট জেনারেল। সরকারী চাকুরীর কারণে নগেন্দ্রনাথ সেনকে চলে যেতে হয় কোলকাতায়। সেখানেই ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম নেন ইলা। জন্মের পর যার নাম রাখা হয় ইলা সেন। আর এই শিশুটিই পরে হয়ে উঠেন বিপ্লবের সূতিকাগার, নাচোলের গণমানুষের ‘রানীমা’।
নগেন্দ্রনাথ সেন যত দিন বেঁচে ছিলেন, মাঝে মাঝে আসতেন নিজ বাড়িতে। শৈশবে বাবার সাথে এসেছেন ইলা মিত্রও, থেকেছেন বেশ কিছু কাল এই প্রত্যন্ত পল্লীতে। ফলে বাড়িটি এই মহিয়সীর স্মৃতিবিজড়িত। নগেন্দ্রনাথ সেনের ছিল বিস্তর ভূ-সম্পত্তি। এই বাড়ির আশপাশের সব জায়গাই ছিল তার মালিকানাধীন। ভারত বিভক্তির পর তার গোমস্তা কালীপদ চক্রবর্তী বেশ কিছু সম্পত্তি নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ওই সময়ে সুযোগ সন্ধানী কতিপয় মানুষ কালীপদ চক্রবর্তীর সহায়তায় হাতিয়ে নেয় বিপুল সম্পত্তি। কিছু জমি বিক্রি করেন নগেন্দ্রনাথ সেনের শাশুড়ি সরোদিনী সেন যদিও সরোদিনী সেন ওই জমির মালিক ছিলেন না। পাকিস্তান আমলে বাদশাহ মিয়া নামে পুলিশের এক কর্মকর্তা হাতিয়ে নেয় বেশ কিছু জমি। সেখানে এখন মাছ চাষের জন্যে খনন করা হয়েছে দীঘি ও পুকুর। বাড়ির প্রাঙ্গনে গড়ে উঠেছে একটি মাদ্রাসা।

জনশ্রুতি আছে, এই এলাকায় একসময় বাঘ ও টিয়া বসত করতো; তাই গ্রামের নাম হয়েছে বাগুটিয়া! তবে নগেন্দ্রনাথের এই বাড়িটি জনবসতি থেকে কিছুটা দূরে। সম্ভবত অধুনা বিলুপ্ত কন্যাদহ বা রাজা মুকুট রায়ের কিংবদন্তিঘেরা দোসতিনে বিলের ভেতর দিয়ে নৌপথে যাতায়াত করতেন বলেই জনবসতি থেকে দুরে বিলের কাছে বাড়ি করেছিলেন, এলাকার প্রবীনদের সাথে কথা বলে জানা যায়। নগেন্দ্রনাথ সেন একসময় নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে পার্শ্ববর্তী হাট ফাজিলপুর গ্রাম থেকে কিছু মানুষকে এনে নিজের বাড়ির পাশে বাড়ি তৈরি করে থাকতে দিয়েছিলেন। এখনও সেখানে একটি হিন্দু পরিবার রয়ে গেছে।

ঝিনাইদহের শৈলকূপার ভূমিকন্যা ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ির সঙ্গে প্রজন্মের কাছে বিস্মৃত তেভাগার ইতিহাস, কালের সাক্ষী পুরাকীর্তি ও প্রত্নসম্পদ হিসাবে স্বীকৃত উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের রায়পাড়ার দ্বিতল ভবনের নয়টি কক্ষবিশিষ্ট কারুকার্যমণ্ডিত বাড়িটি অযত্মে-অবহেলা আর প্রশাসনিক উদাসীনতায় ধ্বংসস্তুপ্রায়। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, উপনিবেশিক পাকিস্তানবিরোধী গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম সুহৃদ ইলা মিত্রের অবদান ইতিহাসের অমরগাঁথা। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সিপিবিসহ ইলা মিত্র স্মৃতি রক্ষায় স্থানীয় বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে পুরাকীর্তি নিদর্শন ঘোষণা ও ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের প্রজ্ঞাপন জারি করার এক দশক পেরিয়ে গেলেও কোনরূপ কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

সরেজমিন ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বাড়িটির অধিকাংশ স্থানে ছোটবড় ফাটল ধরেছে, গজিয়েছে পরগাছা। কোনো কোনো স্থান ধ্বসে পড়েছে অনেক পূর্বেই। বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাস করা মৃত কিয়ামউদ্দিনের সন্তানদের দাবি, তাদের বাবা ইলা মিত্রের উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নিয়েছেন। তারা বৈধভাবেই বাড়িটিতে বসবাস করছেন। এর স্বপক্ষে সব দলিলাদি দেখাতেও তারা প্রস্তুত। তাদের ভাষ্য, তারা টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন বসবাসের জন্য। সরকার যদি সেটি অধিগ্রহণ করতে চায় তাহলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও তাদের সম্মানজনক বসবাসের ব্যবস্থা না করলে তারা ভিটেমাটি হারাবেন।

ইলা মিত্র কিংবদন্তি নারী। বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের চাকরির সুবাদে ইলা সেনের জন্ম কলকাতায়। ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বেঙ্গলের ডেপুটি একাউন্টেন্ট জেনারেল। মা মনোরমা সেন গৃহিণী। ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রাম তাদের পৈতৃক নিবাস। ইলা মিত্রের জন্ম কলকাতায় হলেও ছোটবেলায় তিনি বেশ কয়েকবার বাগুটিয়া গ্রামে এসেছেন। ১৯৪৫ সালে চাপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরের জমিদার বাড়ির রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে ইলা সেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার নাম হয় ইলা মিত্র।

ছাত্রাবস্থায় দেশসেরা পদকজয়ী অ্যাথলেট ছিলেন। বিশ্ব আসরে অলিম্পিক-এ অংশগ্রহণের ডাক পেয়েছিলেন। প্রথম বাঙালি মেয়ে হিসেবে ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ইলা মিত্র। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাতিল হয়ে যায় সেই অলিম্পিক, তবে ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম নেওয়া এই নারী নিজের লড়াকু মনোভাব চিনিয়েছিলেন সেই কিশোরী বয়সেই। পরবর্তীকালে কলকাতার বেথুন কলেজে বাংলা সাহিত্যে বিএ সম্মান শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালীন রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটে তাঁর। নিজেকে সম্পৃক্ত করেন ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’ নামের সংগঠনের সঙ্গে। সেখানে নারীদের অধিকার নিয়ে শুরু হয় তাঁর আন্দোলন এবং খুব দ্রুতই ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন, যখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮। সেই থেকে শুরু তাঁর অপরাজেয় জীবনযাত্রা, যা সমুজ্জ্বল আজও তাঁর মৃত্যুর পরেও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় ও বরণীয়।
ইলা মিত্রের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলনের সময় তার ওপর পুলিশের অমানবিক নির্যাতন চলে। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতায় চলে যান। এরপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি কলকাতার মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। কর্মজীবনে তিনি কলকাতা সিটি কলেজের বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপক হিসেবে ১৯৮৯ সালে অবসর নেন। ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই মহিয়সী নারী কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল  আওয়াল জানান, ‘ইলা মিত্রের বাড়িটি সংরক্ষণের বিষয়ে জ্ঞাত রয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।’

জন্মশতবর্ষ এ বছর পালনের পূর্বে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করা হয়। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিঃ দ্রঃ - বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।