কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানার এসআই বদিউল আলম নানা অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত বদিউল কখনো মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়েছেন। কখনো অর্থের বিনিময়ে খুনের আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কখনো প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করেছেন। এমন কর্মকাণ্ডের পরও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। নতুন করে তিনি আরেকটি অপকর্মে জড়িয়েছেন। এর সিসিটিভি ফুটেজ বুধবার যুগান্তর প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডের আনু মিয়া ফিলিংস্টেশনের সামনে ফাঁদ পেতে সিএনজিচালিত অটোচালক জাফর আলমকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়েছেন এসআই বদিউল আলম। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সেদিন সকালে পুলিশ সদস্যরা যাত্রীবেশে জাফরের গাড়ি ভাড়া করে। ঈদগড়-বাইশারী সড়কের মাথা থেকে চালক জাফরের গাড়িতে ওঠেন এক পুলিশ সদস্য এবং কিছু দূর যাওয়ার পর চালককে দোকানে পানি কিনতে পাঠান। এরপর ওই ব্যক্তি নিজের ব্যাগ থেকে অস্ত্র বের করে গাড়ির পেছনে রেখে নেমে যান। এরপর অল্প দূরে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এক মিনিটের মাথায় ওঁত পেতে থাকা আরেকটি সিএনজিচালিত গাড়ি কয়েক হাত দূরে থামে। তারা অপেক্ষা করতে থাকে চালক জাফরকে ফেরার। জাফর পানি নিয়ে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনামাফিক পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে এসে তাকে আটক করে। এরপর সেই অস্ত্র তার হাতে জোর করে ধরিয়ে ফটো-শুট করে। এ নিন্দনীয় ‘অপারেশন’ পরিচালনা করেন ঈদগাঁও থানার বহু বিতর্কিত ও ‘প্রদীপ-খ্যাত’ এসআই বদিউল আলম, ওসির গানম্যান কনস্টেবল তানভীর ও কনস্টেবল মনির।
এ ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসাবে ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, জাফর ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ভিলেজারপাড়ার ‘ফুদনির ছোঁয়া’ এলাকায় বসবাস করেন। পেশায় তিনি ভাড়ায় সিএনজি চালক। জাফরের মেয়ের অভিযোগ-দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বখাটে শাহীন ও রাসেলের ইভটিজিংয়ের শিকার। বাধ্য হয়ে আমরা মামলা করি। একজন গ্রেফতারও হয়। এরপরই হুমকি ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বখাটেদের টাকা খেয়ে উলটো পুলিশ আমার বাবাকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়েছে। জাফরের স্ত্রী রাবেয়ার অভিযোগ, দুই লাখ টাকা নিয়ে পুলিশ অস্ত্র মামলায় তার স্বামীকে ফাঁসিয়েছে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে এসআই বদিউল কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিবেদকের কাছে তদবির করার জন্য একজন ব্যক্তিকে পাঠিয়ে সংবাদটি বন্ধ করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এদিকে গানম্যান তানভীর জানান, অভিযান হওয়ার পর বদিউল স্যার আমাকে ডাকেন। আমি আর কিছু জানি না।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, এর আগে টেকনাফসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত অবস্থায় এসআই বদিউলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল এবং তাকে তাৎক্ষণিক ক্লোজড করা হয়েছিল। কিন্তু যথাযথ প্রমাণ না থাকায় তিনি পার পেয়ে গেছেন। এবারের ঘটনা সিসিটিভিতে ধরা পড়ায় ‘পার পাওয়ার’ সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমি নিশ্চিত, জাফরকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।